খোকন কুমার রায় :

আজ ২৩ সেপ্টেম্বর, দেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতিসেবী, একুশে টেলিভিশনের সিইও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এই দিনে ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় একাধারে নাট্যকার, আবৃত্তিকার, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, সংগঠক, অনুসন্ধানী পাঠক, প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। আশির দশকের শুরুতে ‘সকাল সন্ধ্যা’ নামের টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা পান।

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু গোপালগঞ্জের এসএম মডেল স্কুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন তিনি। ১৯৮৫ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রতিটি গণমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখছেন।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় নব্বইয়ের দশকে দৈনিক লালসবুজ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। মৌলিক সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, ছড়া এবং সম্পাদনাসহ ১৬টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। পিয়ং ইয়ং ও উত্তর কোরিয়ায় বিশ্বছাত্র-যুব সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এই সম্মেলনে ১৭৫টি দেশের ২৫ লাখ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নিউইয়র্কে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফোবানা সম্মেলনে একাধিকবার অংশগ্রহণ, জার্মানির বার্লিনে আন্তর্জাতিক লোক উৎসবে যোগদান, কলকাতায় আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এবং মিসরের কায়রোতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। একসময় সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

ষাটের দশকের শেষের দিকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। সেই সূত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি সাহচর্যে আসেন। একজন নাট্যজন ও ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ যুবঐক্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং যুবসংগ্রাম পরিষদের নেতা হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। বাংলাদেশের সব যুব সংগঠন নিয়ে যুবসংগ্রাম পরিষদ গঠনে তার অনন্য ভূমিকা ছিল।

২০০৬ সালে ইউরোপে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার মাঠ থেকে সরাসরি তথ্য নিয়ে প্রতিদিন জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় কলাম লিখতেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত থেকে মঞ্চনাটকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। নামী নাট্যদল ঢাকা থিয়েটারের হয়ে তিনি বিখ্যাত নাটক – ‘কীর্তনখোলা’, ‘প্রাচ্য’, ‘বনপাংশুল’, ‘শকুন্তলা’,  ‘বাসন’ ইত্যাদিতে অভিনয় করেন।

চলচ্চিত্র উন্নয়নেও রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। আপাদমস্তক মানবিক ও প্রগতিশীল এই সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষটির চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরু মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’ দিয়ে। এরপর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রে পাদরির ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও ‘গেরিলা’য় অভিনয় করেন।

এছাড়া ‘মহামিলন’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘আধিয়ার’, ‘আমার আছে জল’,  ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ইত্যাদি  চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

তাঁর অভিনয়-জীবনের এক বিশেষ অধ্যায় হলো ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক। প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে থেকে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটক নির্মাণ ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নাটকটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও মুখোশ উন্মোচন করা হয়। নাটকটি লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিকবার মঞ্চায়িত হয়।

বেতার, মঞ্চ, টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র; তিনি অভিনয় করেছেন সব মাধ্যমে। তাঁর সাবলীল অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছে দশকের পর দশক। ভরাট কণ্ঠের সংলাপে তিনি মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের।

বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছেন “সম্প্রীতি বাংলাদেশ” নামের একটি অনবদ্য অরাজনৈতিক সংগঠন। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা। সম্প্রীতির শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে তিনি চষে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তাঁর সম্মেলনে শরিক হন নানা ধর্ম ও মতের মানুষ। সব ভেদাভেদ, মতভেদ ভুলে সবাই এক ছাতার নিচে সামিল হন।

তাঁর এই দীর্ঘ সংগ্রামের পথে নানা বাধা এসেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির কোপানলে পড়েছেন বহুবার। নানা সময়ে লন্ডন, নিউইয়র্ক ও ঢাকায় একাধিকবার তার জীবননাশের চেষ্টাও করা হয়। তবুও থেমে নেই তাঁর এই পথচলা। শুভ জন্মদিন সুহৃদ পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ধূমকেতু ডটকম’ (dailydhumketu.com) পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। কামনা করি আপনার দীর্ঘ কর্মময় জীবন।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতু ডটকম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *