প্রচ্ছদসর্বশেষ

দূষিত শহরে ২-৩ ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোসহ ১৫

সারা দেশে বাযু দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণে রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার, অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, জলাধার সংরক্ষণ, নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ বাস্তবায়নসহ ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

স্টামফোর্ড ইউনির্ভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত প্রতিবেদনে স্বল্প মেয়াদী সুপারিশে বলা হয়, শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন ২-৩ ঘণ্টা পর পর পানি ছিটাতে হবে। নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখা ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করতে হবে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন করতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করতে হবে।

 

প্রতিবেদনে মধ্য মেয়াদী সুপারিশে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর গাছ লাগাতে ও ছাদ বাগানে উৎসাহিত করতে হবে। আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা, দূষিত শহরগুলোর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ, আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো এবং সিটি গভর্নেন্স প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে।
এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদী সুপারিশে নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ বাস্তবায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, গণমাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচার এবং পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ আদালত কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সারাদেশে বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার পরও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উন্নয়নের কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে। আর বায়ু দূষণ জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। সরকার সঠিক পরিকল্পনা নিলে ও বরাদ্দ ঠিকমতো খরচ করলে নির্মাণের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গবেষণার তথ্যগুলোকে আমালে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ু দূষণের কারণে দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। তাই দূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় এখনই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও তৈরি করতে পারে। এ ধরণের বহু রোগের কারণ বায়ু দূষণ।

বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলো নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানান কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী। তিনি বলেন, যানবাহনের ক্ষতিকর ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণেও ডিজেল রোডম্যাপ প্রণয়নসহ বড় বড় শহরে অধিক ধোঁয়া নিঃসরণকারী গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া দূষণরোধে নিয়মিত জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, এটা একটি বেজলাইন স্ট্যাডি। তাই এটি নিয়ে আরো কাজ করা উচিত। তবে সবার আগে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে গবেষণার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ তুলে ধরেন। গবেষণাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এলাকাগুলো ক্যাটাগরি করে রেখেছে। সেটা মাথায় রেখেই ক্যাপসের ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩ স্থানের বায়ুর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা করে গবেষণার ডাটা সংগ্রহণ করা হয়েছে। সেই ডাটা বিশ্লেষণ করে দেশে প্রথমবারের মতো এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *