পর্যটন ও পরিবেশসর্বশেষ

বৈশ্বিক-স্বতন্ত্র দেশের প্রচেষ্টা সুসংহত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: সবার জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠায় কার্যকর নীতি এবং পরিকল্পনার পাশাপাশি বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে স্বতন্ত্র দেশের প্রচেষ্টাকে সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের উৎস বৈশ্বিক, তাই এর সমাধান ও ব্যবস্থাপনাও বৈশ্বিক হতে হবে। যদি শুধু বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং স্বতন্ত্র দেশের প্রচেষ্টাকে সুসংহত করে কার্যকর নীতি, পরিকল্পনা ও শাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তবেই কর্ম প্রচেষ্টা সফল হতে পারে।’

দুর্যোগ সহিষ্ণু অবকাঠামো সংক্রান্ত পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় (পূর্বধারণ করা) মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে যে কোনো উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন এবং সহিষ্ণু অবকাঠামোর জন্য সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময়ের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অপ্রত্যাশিত সংকট মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার এবং সম্মতি অপরিহার্য।

আমাদের সবার জন্য একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংস্থা, বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সংহতি প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপক রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনায় এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে।

সরকারপ্রধান আবারও আমাদের সবার জন্য একটি উন্নত বিশ্ব নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময়োপযোগী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান তিনি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অনাকাঙ্ক্ষিত জলবায়ু বিপর্যয় ও দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আমাদের প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং এ আঘাত ও চাপ সহিষ্ণু শক্তিশালী এবং ভৌত অবকাঠামো প্রয়োজন।

সম্প্রতি তুরস্ক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে বড়ধরনের ভূমিকম্প, ক্যারিবিয়ান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হারিকেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্যার মতো সিরিজ বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বলেন, গত বছর আমরা বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছি। যার ফলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের বিনিয়োগকে রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতের সব অবকাঠামো নির্মাণ এবং পদ্ধতিগুলোকে অবশ্যই দুর্যোগ সহিষ্ণু হতে হবে। জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, খরা এবং বজ্রপাতের মতো ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইপিসিসি রিপোর্ট-২০২২ ভবিষ্যৎ বাণী করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে জিডিপির ২ থেকে ৯ শতাংশ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ শুরু হয় ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেন।’

এ কর্মসূচির আওতায় বঙ্গবন্ধু উপকূলীয় এলাকায় ১ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ এ কেন্দ্রগুলোকে ‘মুজিব কেল্লা’ বলে ডাকতো। এর আগে ১৯৭০ সালে, একটি প্রলয়ঙ্কারি জলোচ্ছ্বাস প্রতিকূলতা সহিষ্ণু অবকাঠামোর অভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের সরকার নিজস্ব সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছে। এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে (সিভিএফ) বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সভাপতিত্বকালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমরা একটি জলবায়ু সহনশীল সমৃদ্ধ দেশ গড়তে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমাদের সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে, এতে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে।’

‘আমাদের সরকার এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং এবং পুনঃখনন করেছে। আমরা ১৩৯টি উপকূলীয় পোল্ডারের পাশাপাশি প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি। এ অবকাঠামোগুলো ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত এক হাজার ২২৯ কিলোমিটার নদী তীর সুরক্ষা বাধ সম্পন্ন করেছি। দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। এর মধ্যে কিছু নিয়মিত স্কুল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।’

‘আমরা এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ ও গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়াসহ একাধিক ব্যবহারের জন্য মাটি উঁচু করে ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করছি। গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৭ লাখেরও বেশি বাড়ি নির্মাণ করে সেগুলো বিনামূল্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ বাড়িগুলো যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনে আমরা কক্সবাজারে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনও নির্মাণ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের স্থানীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি ডিজিটাল তথ্য এবং পরিষেবা কেন্দ্রগুলোকে প্রাথমিক সতর্কতা দিতে ব্যবহার করছি। আমাদের পদক্ষেপের ফলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।’

এম/

আরো পড়ুন:

কোরআন প্রতিযোগিতায় আবারও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হাফেজ তাকরিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *