পর্যটন ও পরিবেশ

কেশবপুরের কালোমুখো হনুমানের জন্য লাগানো হচ্ছে ফলদ গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: যশোরের কেশবপুরে কালোমুখো হনুমান রক্ষায় চারুপীঠ আর্ট স্কুল ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে। অভয়ারণ্যের অভাব ও খাদ্য সংকটের কারণে বিরল প্রজাতির এ প্রাণী বিভিন্ন বাহনে চড়ে দেশের অন্যান্য জেলায় চলে যাচ্ছে।

আর তাই প্রতিষ্ঠানটি হনুমানের জন্য খাদ্য সরবরাহ ও নিরাপদ স্পট তৈরি করতে এক হাজার ফলদ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সুশীল সমাজের নেতারা বলেছেন, স্বল্প পরিসরে হলেও এটি কালোমুখো হনুমানের জন্য সুখকর উদ্যোগ।

উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদিকাল থেকে কেশবপুর শহরের চারপাশে ৫-৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কালোমুখো হনুমানের বাস। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর, হাসপাতাল এলাকা, পাইলট স্কুল, ভোগতী-নরেন্দ্রপুর, মধ্যকুল, রামচন্দ্রপুর, ব্রহ্মকাটি, বালিয়াডাঙ্গাসহ ১২-১৫টি স্থানে ৫ শতাধিক হনুমানের বিচরণ। ২০০৫ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কেশবপুরে হনুমানের জন্য খাদ্য দেওয়া শুরু করে। ওই বরাদ্দ কমতে কমতে বন বিভাগ থেকে বর্তমান হনুমানের জন্য প্রতিদিন ৩৬ কেজি পাকা কলা, ৪ কেজি পাউরুটি ও ৫ কেজি বাদাম দেওয়া হয়। ওই খাবার এত সংখ্যক হনুমানের জন্য যথেষ্ট নয়।

বিভিন্ন সময় পর্যটকরা হনুমান দেখতে এসে যে খাদ্যসামগ্রী দেয় তাতে কিছুটা চলে যায়। এছাড়া স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে হনুমানকে খাবার দিয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাকালে কেশবপুরে পর্যটক না আসায় ও মানুষের জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ায় হনুমানরা চরম খাদ্য সংকটে পড়ে যায়। যে কারণে ক্ষুধার্ত হনুমান ফসলের ক্ষেতে, ফলফলাদির গাছসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও খাবারের দোকানে হানা দেয়। খাদ্য সংকটে পড়ে দলছুট হয়ে কালোমুখো হনুমান দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে থাকে।

কেশবপুর চারুপীঠ আর্ট স্কুলের পরিচালক উৎপল দে বলেন, খাদ্য সংকট ও বিচরণে নিরাপদ জায়গার অভাবে হনুমানরা অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য চারুপীঠ আর্ট স্কুল পরিচালনা কমিটি নিজেদের উদ্যোগে হনুমানের খাদ্য সরবরাহ এবং ভবিষ্যতে তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ও অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে হরিহর নদীর দুই পাড়ে সরকারি জায়গায় এক হাজার ফলদ গাছের চারা রোপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর অংশ হিসেবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে মাসব্যাপী হনুমানগুলোকে প্রতিদিন ১২টি স্পটে ২৪ কেজি পাকা কলা, ১০০ পিচ পাউরুটি ও ২ কেজি বাদাম খেতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে হরিহর নদীর রামচন্দ্রপুর অংশের পাড়ে ১০০ পেয়ারা গাছ ও মধ্যকুল অংশের পাড়ে ১০০ আমড়া, আম, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন ৫ জুন হনুমানের মাসব্যাপী খাদ্য বিতরণ এবং ১২ আগস্ট ফলদ গাছ রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ কাজে শুভাকাঙ্খীরা তাদের সহযোগিতা করছেন।

উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান কেশবপুরের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে চারুপীঠ আর্ট স্কুলের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

কেশবপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, কালোমুখো হনুমানের জন্য খাদ্য বিতরণ ও ফলদ বৃক্ষ রোপন সময়পোযোগী উদ্যোগ। তাদের মতো অন্যদেরও এগিয়ে এসে এ প্রাণীকে রক্ষা করতে হবে।

উপজেলা বন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে কেশবপুরে হনুমানের সংখ্যা ৫ শতাধিক। বনবিভাগ থেকে যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল। হনুমানের খাদ্য সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, করোনাকালে খাদ্য সংকটে থাকা কালোমুখো হনুমানের জন্য চারুপীঠ আর্ট স্কুলের খাদ্য বিতরণ ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তাদের এ কর্মকাণ্ড দেখে ব্যক্তি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে কালোমুখো হনুমানের সুরক্ষায় তা কাজে পাবে।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *