পর্যটন ও পরিবেশ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হয় যে ১০টি ঘূর্ণিঝড়

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: প্রতিকূল জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুঁকি হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। ঝুঁকিসমূহের একটি হলো ঘূর্ণিঝড়। প্রতি বছরই বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতার পর দেশে ঘটে যাওয়া তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়গুলো সম্পর্কে পাঠকদের জানানো হলো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, আবহাওয়া অধিদপতর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

১৯৮৮ এর ঘূর্ণিঝড়: 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৪ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আঘাত হানে একটি  শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এটি যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশালের বিভিন্ন চর এবং উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যায়। বাতাসের বেগ ছিল সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল সাড়ে ১৪ ফুট।ওই ঘূর্ণিঝড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

 ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়:

১৯৯১ সালের ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২৫ কিলোমিটার। ঝড়ের প্রভাবে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়৷ এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের ১৯টি জেলার ১০২টি উপজেলা। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, খেপুপাড়া, ভোলা, টেকনাফ। ১৯৯১ সালের এই ঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় সমপরিমাণ মানুষ আহত হয়। বাস্তুচ্যূত হয় হাজার হাজার মানুষ। লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে উপকূলীয় অঞ্চল।

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর:

ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ছয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার ওই প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় বেশি তাণ্ডব চালায়৷ সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ মানুষ৷ উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়৷

 ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা:

ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে দেশের প্রায় ২০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে।  ২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের ১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ গৃহহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আঘাত হানার সময় এর ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। তবে পরে বাতাসের বেগ কমে যাওয়ায় ক্ষয়-ক্ষতি সিডর থেকে তুলনামূলক কম হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন: 

ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ আঘাতে মৃতের সংখ্যা কম হলেও গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি, যার বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার৷ ওই ঝড়ে বাংলাদেশে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

২০১৫ সালের কোমেন:

ঘূর্ণিঝড় কোমেন বাংলাদেশের প্রায় ৪৫ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড় কোমেন আঘাত হানে। এটি এমন একটি অস্বাভাবিক গ্রীষ্মপ্রধান ঝড় যেটি বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে উৎপন্ন হয়েছিল। এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তরে প্রবাহিত হওয়ার আশেপাশের আরো দেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়। কোমেনের তাণ্ডবের সময় মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ভারতের দক্ষিণ-পূর্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে ১০৩ জন মানুষ মারা যায়।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু: 

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এর আঘাতে বাংলাদেশে মৃত্যু ঘটে ২৬ জনের। ২০১৬ সালে ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক অঞ্চলে ওই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে৷ ঘরবাড়ি, গাছপাল ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোরা:

ঘূর্ণিঝড় মোরা এর আঘাতে মৃত্যু ঘটে তিনজনের।  উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি ২০১৭ সালের ৩০ মে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। সাময়িক সময়ের জন্য পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কক্সবাজারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নষ্ট হয়ে যায় ক্ষেত্রে থাকা ফসল ও জমাকৃত লবণ।

 ঘূর্ণিঝড় ফণী: 

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে ৯ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০১৯ ‍সালের ৩ মে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। সরকারি হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ঘরবাড়ি, বাঁধ, সড়ক ও কৃষিতে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল:

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর আঘাতে ২৪ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে। ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয় গাছপাল, মাঠে থাকা ফসল ও ঘরবাড়ীর। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।

আরো পড়ুন: 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার প্রস্তুতিতে এগিয়ে বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *