নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগি উপজেলার ৩৪টি পরিবারের নারী কারিগররা এখনো বেতের থেকে পণ্য-আসবাব-সামগ্রী উৎপাদন পেশায় টিকে রয়েছেন। প্রধানতঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই বেত দিয়ে নানা আসবাব, পণ্য-সামগ্রী তৈরি  করে থাকেন। এক সময়ে এ অঞ্চলসহ সারা দেশেই বেতের তৈরি সামগ্রীর বেশ চাহিদা ছিলো। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানেও তা রফতানি করা হতো।

বেত থেকে তৈরি হতো নানা নান্দনিক সামগ্রী। বেতের তৈরি শিশুদের দোলনা, পাখা,  টোপা, ওরা, কুলা, মোরা, পুরা, দাড়িপাল্লা, ঝাঁপি, ফুলদানি, ফুলের ডালি, খাবার ঘরের ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, টেবিল, সোফা সেট, খাট, মাছ ধরার পোলোসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র মানুষের দৈনন্দিন কাজে লাগতো, ঘরের শোভা বাড়াতো।

বর্তমান সময়ে ব্যবহার কিছুটা কমলেও এক সময়ে গ্রাম বাংলার সকল কৃষকর তাঁদের ধান চাল মাপার জন্য পুরা ব্যবহার করতো। গৃহস্থালী কাজে দৈনন্দিন রান্না করার জন্য চাল কী পরিমাণ নেওয়া হবে তা পুরা দিয়ে মাপা হতো। এছাড়া কৃষকরা গম, যব, ভূট্টা, বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় শস্য বিভিন্ন আকারের এ পুরা দিয়েই পরিমাপ করতো। গ্রাম বাংলার সনাতন ধর্মের নারীরা এ পুরাকে লক্ষ্মীদেবির বর বা আর্শিবাদ হিসেবে মনে করতো।

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, বেতাগি উপজেলায় পৌরসভা ও ৭ ইউনিয়নে কয়েক বছর  আগেও ২ শতাধিক পরিবার বেত বোনা পেশায় সম্পৃক্ত ছিল। স্থানীয়ভাবে তারা ‘পাটনি’ নামে পরিচিত ছিলো। তবে চাহিদা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এ শিল্প। আধুনিক সভ্যতার দাপটে দৈনন্দিন জীবনধারায় প্লাস্টিক সামগ্রীর আগ্রাসনে মানুষ গৃহস্থালির কাজে  বেত শিল্পে তৈরিকৃত নান্দনিক উপকরণে আগ্রহ হারাচ্ছে। সহজলভ্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল না থাকায় এ পেশার কারিগররা জীবিকার তাগিদে বেঁছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। বর্তমানে এ পেশায় মাত্র ৩৪ পরিবার সম্পৃক্ত রয়েছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু জানিয়েছেন, বেত একপ্রকার একবীজপত্রী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এ জাতীয় উদ্ভিদ বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়ে একটু নিচু জমিতে জন্মানো সম্ভব। 

বাসন্ডা গ্রামের কারিগর কালু হাওলাদার জানান, এ বেত শিল্পের পেশা ধরে রাখতে ধার-দেনা ও বিভিন্ন এনজিওর  টাকা ঋণ নিয়ে কাজ করছেন। তবে বেশি লাভ পাচ্ছেন না, কারণ এর চেয়ে কম দামে বাজারে প্লাস্টিকের সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, এ শিল্পটির উন্নতির জন্য সরকারীভাবে ঋণ দেয়া হয় হলে শিল্পটিকে এখনো টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

বেতাগির উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত কৃষক ও কারিগরদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে যথাযথ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করানো প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন জানিয়েছেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য ও ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের পুনর্বহালের জন্য আগ্রহীদের মাঝে সহজশর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *