পর্যটন ও পরিবেশ

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইমামদের এগিয়ে আসার আহ্বান

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষণের ওপর আমাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা নির্ভরশীল। কোন পরিবেশ মানুষের জন্য কল্যাণকর, কোন পরিবেশে বসবাস করলে মানুষের সুবিধা হবে বা মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, ইসলাম তা সুনিশ্চিত করলেও বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ প্রতিদিন আল্লাহর অপার নিয়ামত এই পরিবেশ নানাভাবে নষ্ট করছে।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। সরকার কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একার পক্ষে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে মসজিদের খতিব/ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

শনিবার (১২ জুন) এ বিষয়গুলো বিবেচনায় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় ইমামদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। বায়তুল মোকাররম হলে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব)।

তিনি বলেন, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে ৩টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যেমন- জগতের সব সৃষ্ট বস্তুই আল্লাহর বলে উপলব্ধি করা, প্রকৃতির সম্পদ সবার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও ন্যায়ভাবে ভোগ করা এবং সঠিক ও পরিমিত ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে আমরা যারা শব্দদূষণের স্রষ্টা বা শিকার সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দূষণ মোকাবিলা করতে হবে। শব্দ দূষণের কারণে শাকসবজি, উদ্ভিদে উৎপাদনশীলতা হ্রাস ও বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়, পশুপাখির ক্ষতি হয়, নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়। এজন্য শব্দদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, জুম্মার নামাজসহ সব নামাজে এবং সবধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দদূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন ও অপরাধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা এবং মসজিদসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে যেন শব্দদূষণ না হয় সেজন্য স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করা দরকার। সর্বপরি সংস্কৃতিগত পরিবেশ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দিতে হবে।

আয়োজনে অপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান নষ্ট করছি। শব্দদূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব ফেলে। শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্লান্তি, অবসাদ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগেরও অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। স্বাভাবিক মানুষের কান ০ থেকে ৬০ ডেসিবল এর শব্দ শুনতে পায় কিন্তু ১২০ থকে ১৪০ ডেসিবলের শব্দ কান বাধার উদ্রেক করে। শব্দদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আলোচনায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, ইমামরা হচ্ছেন সমাজের লিডার। তাদের দিয়ে সমাজ প্রভাবিত হয় বিধায় শব্দদূষণ রোধে খতিব/ইমামদের এগিয়ে আসতে হবে। ৩ লাখ মসজিদে শব্দদূষণ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করতে হবে। ইমামদের প্রশিক্ষণের যে সিলেবাস সেখানে শব্দদূষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, ইমামরা সমাজ পরিবর্তনের বড় হাতিয়ার। শব্দদূষণের মত ক্ষতিকর বিষয়ে ইমামদের সহযোগিতা অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই আগে মানুষকে সচেতন করতে। যেকোনো ক্যাম্পেইন সফল করতে হলে পরিকল্পনা ও অর্থের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সম্পৃক্ত ও সচেতন করা জরুরি। মানুষকে সচেতন করার জন্য তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইমামদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *