অর্থনীতি

কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাবেন, জেনে নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: স্বল্প আয়ের লোকজন তো বটেই, সবাই পথ খোঁজেন কীভাবে আয়কর কম দেওয়া যায়। চাকরিজীবী করদাতাদের প্রতিষ্ঠান উৎসে আয়কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে সঠিক খাতে বিনিয়োগ করলে তাদের অন্য কোনো আয় না থাকলে উৎসে কর কর্তনের টাকা দিয়েই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব।

এ ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সঠিক ধারণা না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে। যেমন অনেকে মনে করেন, জমি বা ফ্ল্যাট, স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বা আয়কর আইনে অনুমোদন খাত ছাড়া অন্য খাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।

আবার অনেকে মনে করেন, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন প্রথম বছর আয়কর রেয়াত গ্রহণ করেছেন, পরের বছর আর কোনো বিনিয়োগ করেননি। এ ক্ষেত্রে পরের বছর বেশি আয়কর আসবে। সঞ্চয়পত্র যে বছর ক্রয় করা হবে, সে বছর শুধু আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম এবং ধর্মপরায়ণ হিসেবে অনেকেই যাকাত দেন। এ ক্ষেত্রে যদি সরকারি তহবিলে যাকাত দেন, তবেই আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএস ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেয়াত পাওয়া যায়, এর বেশি হলে পাওয়া যায় না। এ বছর ১ জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যারা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন, শুধু তারাই এ বছর বিনিয়োগের ওপর রেয়াত পাবেন। যারা করেননি, এখন থেকে পরিকল্পনা করুন যাতে আগামী বছর থেকে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে এবং যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে।

বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা হবে করযোগ্য মোট আয়ের (কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত করহারের আয় ব্যতীত) ২৫ শতাংশ বা প্রকৃত বিনিয়োগ অথবা ১ কোটি টাকা, এই তিনটির মধ্যে যেটি কম। রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে মোট আয় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে এবং ১৫ লাখ টাকার অধিক ১০ শতাংশ হারে।

বিনিয়োগের খাত

একজন করদাতার বিনিয়োগ ও দানের সম্ভাব্য খাতের তালিকা-

১. জীবনবিমার প্রিমিয়াম;

২. সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা;

৩. স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা;

৪. কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা;

৫. সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড প্রদত্ত চাঁদা;

৬. যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ;

৭. সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ;

৮. বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ এবং

৯. বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ।

কোথায় দান করলে রেয়াত

১. জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান;

২. জাকাত তহবিলে দান;

৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান;

৪. প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান;

৫. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদত্ত দান;

৬. আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে দান;

৭. আইসিডিডিআরবিতে প্রদত্ত দান;

৮. সিআরপি, সাভারে প্রদত্ত দান;

৯. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান;

১০. এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশে দান;

১১. ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে দান এবং

১২. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুদান।

বিনিয়োগ বা দানের প্রমাণপত্র রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

আয়কর রিটার্ন দেওয়ার মাস নভেম্বর। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়, তাই শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়া থেকে বাঁচতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

লেখক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, আয়কর আইনজীবী, নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন:

আয়কর মাস শুরু হচ্ছে আজ থেকে

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *