শুভাশীষ বিশ্বাস:

গত ২০ মার্চ ঢাকার উত্তর টোলারবাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই ঐদিন রাত্রে মসজিদের মাইকে ঢাকা-১৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে চলাচল সীমিতকরণ (লকডাউন) করেন এবং এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মোজাম্মেল সাহেবকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও যখন এ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছিলাম না তখন এমপি সাহেবই এ্যাম্বুল্যান্স ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।

উত্তর টোলারবাগকে করোনামুক্ত রাখতে রোজ ভ্যালিতে বসবাসরত ডাঃ আয়েশা, আইইডিসিআর এর ক্যাপ্টেন ফারুক, ডাঃ শাহাদাত, বাড়ি মালিক সমিতি ও এমপি মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় একের পর এক স্যাম্পল কালেকশনের মাধ্যমে ১৮ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। ইতোমধ্যে ১৬ জন সুস্থ হয়েছেন। আর নতুন সংক্রমণ নেই। যা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

এমপি স্যার সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। উল্লেখ্য যে, আমরা সকল বাড়ির দারোয়ান ও নিরাপত্তা প্রহরীদের স্যাম্পল টেস্ট করিয়েছি, কারণ এদের মাধ্যমেই ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।

লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য এমপি মহোদয়ের নির্দেশনাক্রমে মিরপুর বিভাগের ডিসি মোস্তাক সাহেব, এডিসি মাহমুদা আক্তার লাকী, এসি মিজানুর রহমান সাহেব ও দারুসসালাম থানার ওসি তোফায়েল সাহেব নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এলাকা জীবাণুমুক্ত করার জন্য ডিএনসিসির মেয়র, কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু, মুরাদ হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন সাহেব ও ৪নং জোনের নির্বাহী সালেহা বেগমসহ সকলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷

এমপি মহোদয় আমাদের দুটি স্প্রে মেশিন দিয়েছেন। তা দিয়ে ও সিটি করপোরেশনের গাড়ির মাধ্যমে রাস্তায় একদিন পর পর মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে ব্লিচিং, পানি ছিটানো হচ্ছে। আমাদের এই মহল্লার তিনটি গেট বন্ধ রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যান না। কিছু প্রয়োজন হলে দোকানে ফোন করে। দোকানী বাসার নীচে দিয়ে যায়।

সকলের সহযোগিতায় আমরা মহল্লার গাড়ীতে স্টিকার দেওয়ার চিন্তা করছি ও জীবাণুমুক্ত গেট বসানোর চেষ্টা করছি। উত্তর টোলারবাগের পিছনে একটা বস্তি রয়েছে এখানে ১৬৬টি পরিবার রয়েছে। এদের প্রতিও এমপি মহোদয় ও কমিশনার মহোদয়ের সার্বিক সদয় দৃষ্টি আছে।

ইতোমধ্যে দুইবার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আবার প্রস্তুতি চলছে। শবেবরাত এর প্রাক্কালে এমপি মহোদয় ফ্লাটবাসী ৭০০ পরিবারের জন্য উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন এবং পবিত্র রমজানের প্রাক্কালেও পাঠালেন যা অতি কষ্ট করে এই বৃষ্টির মধ্যে দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি ভাই আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিলেন।

আমাদের বৃহত্তর টোলারবাগে প্রায় ২৫,০০০ মানুষের বসবাস। টোলারবাগের সমাজকল্যাণের নেতৃবৃন্দও নিরলসভাবে চেষ্টা করছেন এলাকাকে সংক্রমণমুক্ত রাখতে, যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

টোলারবাগের একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি গর্বিত এই কারণে যে, মানুষে-মানুষে এমন বন্ধন ঢাকা শহরের আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। সাময়িক কষ্ট হলেও নিজের পরিবারের স্বার্থে সবাই নিয়ম-কানুন মেনে চলবেন বলে আমাদের বিশ্বাস৷

তবে ভুলে গেলে চলবে না করোনা মহামারীর ৪র্থ পর্যায়ে রয়েছি আমরা। যা আমরা অর্জন করেছি তা ধরে রাখতে হবে। এই কয়েক দিনে অনেক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী আমি। আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। আমারা ঘরে থাকবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো, নিজের পরিবার ও দেশকে নিরাপদ রাখবো। মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, উপদেষ্টা পরিষদ, মসজিদ কমিটি ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *