সর্বশেষ

নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রি শুরু হয়নি আরও কমল টাকার মান

এদিকে গতকাল ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলার কিনতে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা পর্যন্ত দাম দেয়। তবে খুব বেশি ডলার পায়নি। অবশ্য এমনিতেই সোমবার প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কম থাকে। কারণ, বিশ্ববাজারে আগের দিন রোববার লেনদেন বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষ নেতারা রোববার এক সভায় বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করেন। এতে ব্যাংক খাতের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে ওই সভার পর বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বাফেদা দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতে ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে বেশি দামে ডলার কেনা হচ্ছে না। তবে শেষ পাঁচ দিনে যে ডলার কেনা হয়েছে, তার গড় হিসাব করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে ডলারের দাম ঘোষিত মূল্যে চলে আসবে।

বাজার পরিস্থিতি

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সোনালী এক্সচেঞ্জ গতকাল প্রবাসীদের থেকে ডলার কিনেছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এর আগের লেনদেনে যা ছিল ১১২ টাকা। এ ছাড়া রেমিট্যান্স হাউস স্মল ওয়ার্ল্ড প্রবাসী আয়ে দাম দেয় ১০৭ টাকা, মানিগ্রাম দাম দেয় ১১০ টাকা পর্যন্ত। তবে মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরবের কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কেনে ১০৮ টাকার মধ্যে।

এদিকে বাফেদার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আমদানিতে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা ৭৮ পয়সা দাম নিয়েছে কমপক্ষে ১৯টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো আল-আরাফাহ, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, যমুনা, অগ্রণী, ট্রাস্ট, যমুনা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আইসিবি ইসলামিক, ন্যাশনাল, পূবালী, বিডিবিএল, সোনালী, কৃষি, ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ও এনআরবি ব্যাংক।

ডলারের খরচ কত

বাফেদা ও এবিবি সিদ্ধান্ত দিয়েছে, পাঁচ কর্মদিবসে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে ডলারে যে দাম পড়বে, তা গড় হিসাব করে ডলারের দাম নির্ধারণ হবে। সে হিসাবে গতকাল ডলারে সবচেয়ে বেশি খরচ দেখিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। ব্যাংকটি প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা ১৮ পয়সার কথা জানিয়েছে। এরপরই পূবালী ব্যাংকের ডলারের খরচ ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা, এনসিসি ব্যাংকের ১০৯ টাকা ১৪ পয়সা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১০৮ টাকা ৯১ পয়সা, আল-আরাফাহ ইসলামীতে ১০৮ টাকা ৮৯ পয়সা, দি সিটি ব্যাংকের ১০৮ টাকা ৮৪ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ১০৭ টাকা ৭৮ পয়সা ও সোনালী ব্যাংকের ১০৭ টাকা ৬৯ পয়সা।

জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ দিনের গড় দামের কারণে ইসলামী ব্যাংকে ডলারের খরচ ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। তবে সব ব্যাংক এখন এক দামে ডলার কেনা শুরু করেছে। আশা করছি, তিন-চার দিনের মধ্যে দাম কমে আসবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

কমল টাকার মান

গত মে মাস থেকে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে ডলারের চাহিদা মিটছে না। এতে সংকট তৈরি হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ পরিশোধ, জাহাজ ও বিমানভাড়া, প্রযুক্তি ও সেবা খাতে বিদেশি বিল, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ আরও নানা খাতে ডলারের খরচ। আমদানি কমাতে নানা পদক্ষেপের ফলে ঋণপত্র খোলা কমেছে, বেড়েছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ও।

তারপরও ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। প্রতিনিয়ত বিক্রি করছে ডলার। ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্তের এক দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল প্রতি ডলারের দাম ৯৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৬ টাকা নির্ধারণ করেছে। এই দামে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রিও করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভও কমে হয়েছে ৩ হাজার ৭১৩ কোটি ডলার। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন দামে গতকাল ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *