প্রচ্ছদ

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য পাচ্ছে প্রথম নারী গভর্নর

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তাঁর নাম ক্যাথি হকুল (৬২)।

যৌন হয়রানির অভিযোগে অপরাধ আইনে তদন্তের মধ্যে ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো (৬৩) পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ১৪ দিনের মধ্যে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে। কুমোর অবশিষ্ট মেয়াদকালের জন্য দায়িত্ব নেবেন অঙ্গরাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যাথি।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক সদস্য ক্যাথি। ২০১৪ সালে ক্যাথিকে লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে রানিং মেট করে গভর্নর নির্বাচনে জয় লাভ করেন কুমো। কুমো-ক্যাথি জুটি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন। সে হিসাবে ২০১৫ সাল থেকে অঙ্গরাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ক্যাথি। তারকা রাজনীতিবিদ কুমোর দাপটে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যাথি এত দিন পাদপ্রদীপের আড়ালেই ছিলেন। এখন তাঁর সামনে আসার সুযোগ হলো।

১৯৫৮ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রান্তিক নগরী বাফেলোর এক কর্মজীবী পরিবারে জন্ম নেওয়া ক্যাথি নিজেকে স্বাধীন ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচয় দেন। কুমোর পদত্যাগের ঘোষণার পর ক্যাথি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছেন, নিউইয়র্কের স্বার্থে গভর্নর কুমো পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজটিই করেছেন।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ক্যাথি বলেছেন, তিনি নিউইয়র্কের ৫৭তম গভর্নরের দায়িত্ব পালনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুমো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে এখন সাহায্য করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পদত্যাগ করা এবং সরকারকে শাসনকাজ পরিচালনা করতে দেওয়া।’

কুমো বলেন, ‘আমি একজন যোদ্ধা। আমি লড়াই চালিয়ে যাব। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ বিতর্ক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি মনে করি, এটি অন্যায় ও অসত্য।’

সংবাদ সম্মেলনে কুমো তাঁর কৃতকর্মের দায় গ্রহণ করে দুঃখ প্রকাশ করেন। গত সপ্তাহে কুমোর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে তাঁর ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল। পদত্যাগ না করলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা তাঁর অভিশংসনের পরিকল্পনা করছিলেন। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কুমোর পদত্যাগ চেয়েছিলেন।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল দপ্তরের তদন্তে বলা হয়, ১১ জন নারীকে যৌন হয়রানির বিষয়ে কুমোর বিরুদ্ধে তথ্য মিলেছে। ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে অঙ্গরাজ্যের কর্মীও রয়েছেন। কুমোর পক্ষ থেকে যৌন হয়রানির সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

গভর্নর কুমোর বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে ক্যাথি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন কাউন্টি ঘুরে বেড়াতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফিতা কাটতেন। গভর্নরকে প্রতিনিধিত্ব করা ছাড়া তাঁর তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ত না। সংবাদমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে তেমন কোনো সংবাদ আসত না।

গত সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্যাথি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যেসব নারী গভর্নর কুমোর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সামনে এসেছেন, তাঁদের তিনি সাহসী হিসেবে অভিহিত করেন।

কুমো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে নবম গভর্নর, যাঁকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে হলো। তিন দফা অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত কুমো চতুর্থ মেয়াদের জন্য নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন।

চতুর্থ দফা অঙ্গরাজ্য গভর্নর নির্বাচিত হয়ে কুমো তাঁর বাবা মারিও কুমো যা পারেননি, তা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কুমোর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অনেক ডেমোক্র্যাট তাঁকে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছিলেন।

কুমো তাঁর পদত্যাগের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি টানছেন, এমনটা মনে করা হচ্ছে না। পদত্যাগের পরও আগামী নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হতে কোনো অসুবিধা নেই। তাঁর সমর্থকেরা মনে করছেন, রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার সব চেষ্টাই করে যাবেন কুমো।

বর্তমান গভর্নরের মেয়াদ পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাথি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে ক্যাথিই হতে যাচ্ছেন সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচিত নারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *