শিল্প ও বাণিজ্য

বাড়ছে ফেসবুক-কেন্দ্রিক ব্যবসা || সতর্ক থাকতে হবে প্রতারণা থেকে

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশে ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়িক উদ্যোগ এফ-কমার্স বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেসবুকে অন্তত ১০ লাখ ছোট-বড় উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা পেজ খুলে ইলেকট্রনিক পণ্য, গ্যাজেটস, ফ্যাশনসামগ্রী, কসমেটিকসসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। তবে এ ধরনের ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফেসবুকে কেনাকাটা নিয়ে অভিযোগ দিলেও গুরুত্ব দেয় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকরা থাকছেন নজরদারি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব মতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ১০ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ। আর এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আছেন। সর্বশেষ মে মাসের হিসাবে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী চার কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার; যার ৪০ ভাগ নারী। বিপুলসংখ্যক এই ব্যবহারকারীর কাছে পণ্য বিক্রির সহজ মাধ্যম ফেসবুক। তবে এক্ষেত্রে বেড়েছে প্রতারকের আনাগোনা। তারা নানা কৌশলে ক্রেতা ঠকাচ্ছেন।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব এবং ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তার সংখ্যা ১০ লাখের কম নয়। ই-কমার্স ভিত্তিক কুরিয়ার সেবা ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, তারা গড়ে দিনে প্রায় ২৫ হাজার অর্ডার ডেলিভারি দেন; যার অধিকাংশই ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের অর্ডার।

তিনি জানান, ইভ্যালি, দারাজের মতো কয়েকটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বাদে অনলাইনে পুরো ব্যবসা ফেসবুককেন্দ্রিক। ই-কমার্স কুরিয়ার সেবা পেপারফ্লাইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা রাহাত আহমেদ জানান, তারা দিনে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার ডেলিভারি করেন, যার বড় অংশ ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তার পণ্য।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসায় নানা ধরনের প্রতারণা হচ্ছে। এর মধ্যে এক ধরনের প্রতারক যাদের কোনো পণ্যই নেই কিংবা ব্যবসা নেই, ভুয়া পেজ খুলে অন্য কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্যের ছবি আপলোড করে ক্রেতা আকৃষ্ট করছেন। তারা ক্রেতার থেকে পণ্যের অর্ডার নিয়ে অর্থ হাতিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। পেজ ডিজঅ্যাবল (নিষ্ফ্ক্রিয়) করে দিচ্ছেন। ক্রেতারা ওই পেজ কিংবা তাদের ফোন নম্বরে খুঁজে না পেয়ে বুঝতে পারছেন প্রতারিত হয়েছেন।

এ ধরনের প্রতারণার শিকার একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক মাহমুদ হোসেন বলেন, একটি অনলাইন শপের পেজের মোবাইল নম্বরে দুই হাজার ৬০০ টাকা বিকাশ করে আমের অর্ডার কনফার্ম করি। তিন দিনের কথা বলে মাস পার হলেও তারা আম ডেলিভারি দেয়নি। পরে পেজটিই ডিজঅ্যাবল করে দিয়েছে। মাহমুদ হোসেন বলেন, তার সঙ্গে আরও অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। সেসব স্ট্ক্রিনশট দিয়ে তিনি জানান, ‘একই নামে ফেসবুকে আরও পেজ থাকলেও সেগুলো ওই পেজটি নয়।’

ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ উইমেন ইন ই-কমার্সের (উই) প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, তাদের গ্রুপেই ১০ লাখের বেশি সদস্য রয়েছেন যাদের বড় একটি অংশ উদ্যোক্তা। তাদের গ্রুপে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাই বেশি। গ্রুপের উদ্যোক্তা ও ক্রেতার মধ্যে প্রতারণা কিংবা ভুল বোঝাবুঝি হলে সেটি আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।

প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে ক্রেতাদের ফেসবুককেন্দ্রিক কেনাকাটায় পণ্যের দাম আগে শোধ না করে পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য (ক্যাশ অন ডেলিভারি) প্রদানের আহ্বান জানান নিশা।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ফেসবুকভিত্তিক কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনা নিয়ে আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আসছে। অনেক উদ্যোক্তার তো কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই, ডকুমেন্ট নেই। ফলে তারা প্রতারণা করলে ধরা কঠিন। এজন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের এনআইডির মতো ডকুমেন্ট নিয়ে যেন তাদের ব্যবসায়ের অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। এতে যেমন এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে, তেমনি প্রয়োজনে সহযোগিতাও করা সম্ভব হবে।

পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ফেসবুককেন্দ্রিক কেনাকাটায় প্রতারণা কিংবা পণ্য সময়মতো না পাওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ভুক্তভোগীদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যাওয়ার পরামর্শ দেই।’

ই-মেইলে এ অভিযোগ সম্পর্কে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। আমাদের কঠোর ই-কমার্স নীতিমালা রয়েছে। আমরা ব্যবহারকারীদের সব সময় স্ক্যামারদের (প্রতারক) সম্পর্কে রিপোর্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। এ ধরনের প্রতারণামূলক ঘটনা আমাদের নজরে এলে সেসব পেজ ফেসবুক থেকে আমরা অপসারণ করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *