স্বাস্থ্য

নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা || চলছে মৌসুমী জ্বরের মৌসুম

বিশেষ প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী জ্বরের সময়। করোনার পাশাপাশি মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। করোনা ভাইরাস ও মৌসুমী জ্বরের মধ্যে একাধিক উপসর্গের মিল রয়েছে। তাই সর্দি-কাশি ও জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে রাজধানীতে। চিকিৎসকেরা এমন অবস্থাকে বলছেন ‘মৌসুমী জ্বর’। ভাইরাসজনিত কারণে এমনটি হয়ে থাকে। তাই কেউ কেউ এটাকে ভাইরাস জ্বরও বলে থাকেন। সব বয়সের মানুষই এ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এ জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছেন। মৌসুমী জ্বর ও করোনা ভাইরাসের উপসর্গসমূহের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন নিউমোনিয়ায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমী জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। কিন্তু করোনা ও মৌসুমী জ্বরের মধ্যে একাধিক উপসর্গের মিল থাকায় সর্দি-কাশি ও জ্বর হলেই তা গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ক্ষেপণ না করে শরণাপন্ন হতে হবে চিকিৎসকের।
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, মৌসুমি জ্বর, কাশি বা ফ্লু এই সময়ের খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে চলতি বছর করোনার আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে সবাইকে। জ্বর, কাশি ও গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে এখন দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি। যেসব উপসর্গে দুটিই ভাইরাসজনিত রোগ। সংক্রমণ ছড়ায় পরস্পরের সংস্পর্শে। একজনের শরীর থেকে সর্দি ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম দুটোই। সময়মতো সচেতন না হলে বা বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়ার দিকে বাঁক নিতে পারে দুটিই। বিশেষ করে যারা বয়োবৃদ্ধ ও যাদের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা কম, তাদের জন্য ফ্লু বা করোনা দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্লু ও করোনা দুটিই কিছু সাধারণ সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। মুখে মাস্ক পরা, হাঁচি–কাশির আদবকেতা মেনে চলা, বারবার হাত ধোয়া ও অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে দুটিই প্রতিহত করা সম্ভব।
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান আরও জানান, ফ্লু ও করোনা দুটিই ভাইরাসজনিত অসুখ হলেও দুই রোগের ভাইরাস সমগোত্রীয় নয়। ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণে হয়, আর করোনা হয় করোনা গ্রুপের ভাইরাসের কারণে। আর ফ্লুর তুলনায় বেশি সংখ্যক মানুষের তীব্র জটিলতা বা জীবনসংশয় দেখা দিতে পারে করোনার কারণে। করোনাভাইরাস ছড়ায় দ্রুত, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের তুলনায়। ফ্লুর বেলায় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২-৩ দিনের মধ্যে অসুখ দেখা দেয়। করোনাভাইরাসের বেলায় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। আবার করোনার একটা উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে আক্রান্তের একটা বড় অংশই একেবারে উপসর্গহীন থাকতে পারে। বিশেষ করে অল্পবয়স্ক শিশু–কিশোর বা তরুণদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও তা তেমন লক্ষণ প্রকাশ না করেও থাকতে পারে।
তবে এরা লক্ষণহীন হলেও সংক্রমণ বিস্তারে ভূমিকা রাখে। ফ্লুর ক্ষেত্রে জ্বর ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যেতে পারে, ওষুধের কাজ শুরু হলে তা নামতেও শুরু করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে জ্বর প্রবল হলেও নামতে চায় না সহজে। ওষুধও কাজ করে না। আবার কারও কারও জ্বরই থাকে না। ফ্লু বোঝার জন্য কোনো আলাদা করে পরীক্ষার দরকার পড়ে না। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত করতে পলিমারেস চেইন রি–অ্যাকশন বা পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। ফ্লুর জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক অনেক আগে থেকেই রয়েছে।
করোনাভাইরাস রোধে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক সম্প্রতি উদ্ভাবন হয়েছে, যার প্রয়োগ চলছে সারাবিশ্বে। কিন্তু ভ্যাকসিন পাওয়া এখনও সহজ হয়ে উঠেনি। ফ্লু–জনিত নিউমোনিয়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য জটিল পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কিন্তু কোভিড নিউমোনিয়া সাধারণত শিশুদের জন্য তেমন মারাত্মক আকার ধারণ করে না, যদি না সেই শিশু আগে থেকেই অসুস্থ রোগাক্রান্ত বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
সাধারণ ফ্লুতে প্যারাসিটামল, বিশ্রাম আর পুষ্টিকর খাবার ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে করোনায় আক্রান্ত হলে অক্সিজেন থেরাপি, এন্টগুয়ালেন্টসহ নানা ধরনের পর্যায় বুঝে চিকিৎসার দরকার আছে বলে জানান বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেনও সর্দি-কাশি জ্বর হলেই সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, মার্চ-এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী অসুখের প্রকোপ থাকে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। তাছাড়া মৌসুমী জ্বর ও করোনা ভাইরাসের উপসর্গসমূহের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। তাই মৌসুমী জ্বর ভেবে বসে থাকা যাবে না। সর্দি-কাশি ও জ্বর দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *