অভিমত

ভয় নেই কার্যকর ওষুধ আসছে, নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে করোনা : ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল

ধূমকেতু প্রতিবেদক: করোনা স্থবির করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ। কোভিড-১৯ আতঙ্কে কাঁপছে বাংলাদেশও। যদিও বাংলাদেশে সংক্রমণ এখনো কম, তবু বিপুল ঘনবসতির এই দেশে পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাঁচজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। সারা দেশ চলে গেছে লক ডাউনে। এমন পরিস্থিতিতে ২৩ মার্চ ধূমকেতুডটকম-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল এর সঙ্গে। যিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক গবেষণার সঙ্গেও যুক্ত। ডা. মামুন আশ্বস্ত করলেন, আতঙ্কিত না হতে। এর কার্যকর ওষুধ ও ভ্যাকসিন শিগগিরই চলে আসবে। আর এই ভাইরাস চার-পাঁচ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমাদের শরীরে গড়ে উঠবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন “ধূমকেতু” এর নির্বাহী সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল জুয়েল।

ধূমকেতু: এই পরিস্থিতির শেষ কোথায় এবং একজন চিকিৎসক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে আপনি কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: এর শেষ কোথায় এটা এখন বোধ হয় কেউই বলতে পারবে না। আমিও বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলতে পারি শেষটা অবশ্যই হবে। এটা এমন কোনো জিনিস না যে এটা দিয়ে মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে। সব মানুষ মারা পড়বে তাও না। কতগুলো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর এ কথা বলা যায়। এগুলো হলো- ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তিন মাসে না হোক ছয় মাসে ভ্যাকসিন চলে আসবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো- এই ভাইরাসে এতো মানুষ কেন অসুস্থ হচ্ছে বা মারা যাচ্ছে? কারণ এটি আমাদের জন্য নতুন একটি জীবাণু। এর বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না। যখন আস্তে আস্তে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে যাবে তখন আশেপাশের অনেক মানুষের মধ্যে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সারা জীবন স্থায়ী হবে, নাকি কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহ হবে সেটা আমরা জানি না। কারণ ভাইরাসের রূপটাই নতুন। কিন্তু একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অবশ্যই তৈরি হবে। যেমন- যখন সংক্রমিত হওয়ার কারণে দশ জন মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে তখন আশেপাশের আরো পাঁচ-সাত জন বা দশ জনের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডেভেলপ করবে। এটাকে হার্ড ইমিউনিটি বলে। একটা সময় আসবে যখন এই ভাইরাসটা আমাদের আশেপাশেই থাকবে কিন্তু হার্ড ইমিউনিটির কারণে বা ভ্যাকসিনের কারণে এটি নতুন করে আর সংক্রমিত করতে পারবে না। ফলে একটা পর্যায়ে এটি থামতে বাধ্য হবে। সেটা কবে হবে তা আমরা বলতে পারি না। যত তাড়াতাড়ি থামবে ততই মঙ্গল। তবে আমার মনে হয় আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

আর মানুষকে আশ্বস্ত করার জায়গাটা হলো- সবাই কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। ৮০ ভাগ মানুষের উপসর্গই থাকবে না। যেমন ২২ মার্চ চীনে একটি দলিল প্রকাশিত হয়েছে যে, চীনে প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। অর্থাৎ ৪০ কোটির বেশি মানুষ সংক্রমিত ছিল। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কিছু সংখ্যক মানুষ মারা গেছে।

আমাদের এখানে বলবো, গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন কিন্তু আতঙ্কিত হবেন না। কারণ আতঙ্কিত মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আতঙ্কিত মানুষ কোনো কিছু জয় করতে পারে না। আমি বলবো, সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলুন। আমার ধারণা এর প্রকোপ আমরা যা ভাবছি তার চেয়ে কম হবে।

ধূমকেতু: যদি ডিজাস্টার দেখা দেয় তাহলে সেটা সামলাবার মতো আমাদের জাতীয় প্রস্তুতি কতটুকু আছে বলে মনে করেন?

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: প্রস্তুতি আছে কি নেই সেটা বিপর্যয় না আসা পর্যন্ত বলা যাবে না। এটা এমন একটা পরিস্থিতি, মানব জাতির ইতিহাসে এতো বড় বিপর্যয় মানুষ আর দেখেনি। এর চেয়ে অনেক বড় মহামারীর কথা আমাদের ইতিহাসে রেকর্ডেড আছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইউরোপের যে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ তাতে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক মানুষ মারা গেছে। কিংবা স্প্যানিশ ফ্লু, হংকং ফ্লুতে পাঁচ কোটি, ছয় কোটি লোক মারা গেছে। তবে কোথাও কিন্তু পুরো পৃথিবী আক্রান্ত হয়ে যায়নি। কদিন আগে সার্স, মার্স হলো সেখানেও পুরো পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। এবার কিন্তু চিত্রটা ভিন্ন। করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। নিশ্চয় আমেরিকা মনে করেছে যে তার প্রস্তুতি অসাধারণ। এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মার্কিন সরকার। ইতালির প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় ভেবেছেন তার দেশ যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইউরোপের মধ্যে অন্যতম সেরা, তাদের গড় আয়ু ইউরোপের মধ্যে বেশি। এটা যে তাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়াবে, বেশি বয়স্ক মানুষগুলো যে ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে দেবে তারা কি এটা বুঝতে পেরেছিলেন? আবার দেখুন অনেক ছোট ছোট দেশ তারা কিন্তু পেরেছে। ভুটানের মতো দেশে একটি মাত্র রোগী। তাও বাইরের রোগী। ফলে কে পারবে, কে পারবে না এটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে আমরা যেভাবে আগাচ্ছি প্রটোকল অনুযায়ীই আগাচ্ছি। আমরা যদি সরকারি উদ্যোগগুলোকে সমর্থন দিই তাহলে আমার ধারণা আমরা একটা সহনশীল মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।

সরকারি উদ্যোগকে সমর্থন বলতে আমি বোঝাচ্ছি- দেখুন সরকার তো পুরো জাতিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। গৃহবন্দী করতে পারবে না। আমার সাথে কদিন আগে একজন ভদ্রলোকের পরিচয়। উনি বলছিলেন যে তার স্ত্রী হলেন চায়নিজ। তার শ্বশুর-শাশুড়ি চীনে ছিলেন। তারা যে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকেন সেখানে কয়েকশ অ্যাপর্টমেন্ট আছে। পুরো কমপ্লেক্সের জন্য একজন মাত্র নিরাপত্তা প্রহরী। চীন সরকার নিয়ম করেছে অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে একবারের জন্য বের হতে পারবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবার ঢুকতে হবে। কয়েকশ অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা অক্ষরে অক্ষরে এই নিয়ম মেনেছে। একজন মাত্র নিরাপত্তা প্রহরী এই সিস্টেমটা মেনটেইন করেছে। অথচ আমাদের দেশে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। এখানে লোকজন দেশের বাইরে থেকে এসে বিয়ে-শাদী পর্যন্ত করছে। এই অ্যাটিচিউড থাকলে কখনোই মহামারীর বিপদ থেকে রক্ষা করা যাবে না। এটা কিন্তু বললে হবে না যে সরকার এখানে ব্যর্থ ছিল। সরকার তার দায়িত্ব পালন করছে। কিছু জিনিস খুব দ্রুত করছে। কিছু হয়তো একটু দেরিতে হচ্ছে। সেটা মেকাপ হয়ে যাবে। কিন্তু জনগণ হিসেবে আমি কী করছি সেটাও কিন্তু আমাকে চিন্তায় রাখতে হবে। জনগণের সচেতন হওয়াটা খুবই জরুরি।

ধূমকেতু: একটি বিষয় আলোচনা হচ্ছে যে উহান পরিস্থিতির পর প্রথম দিকে আমরা যে ট্যাকেলটা দিয়েছিলাম, চীন থেকে যারা আসলো তাদেরকে সুন্দরভাবে কোয়ারেন্টাইন করতে পেরেছিলাম। পরবর্তীতে ইতালি থেকে যারা আসলো তাদের ক্ষেত্রে একটু শৈথিল্য ছিল কিনা?

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: দেখুন মোটা দাগে এটা বিশ্লেষণ করা যাবে না। উহান থেকে যেসব বাংলাদেশী এসেছিল তারা মূলত ছাত্র এবং শিক্ষক। পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা একজন গড়পরতা মানুষের চেয়ে তাদের বেশি ছিল। উহানে মাত্র কয়েকশ বাংলাদেশী ছিল। আমি সেখানে খবর নিয়ে দেখেছি যে তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ কম ছিল। উহানে সম্ভবত কোনো বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টও নেই। এবং চীন যে একটা ভালো কাজ করেছিল তা হলো- শুরুতেই উহানকে লকডাউন করে দিয়েছিল। উহান থেকেই রোগ ধীরে ধীরে পুরো চীনে ছড়িয়েছে। আর চীন সবচেয়ে প্রশংসনীয় যে কাজটি করেছে তা হলো যখন কেউ চীন থেকে বিদেশে গেছে তারা কোয়ারেন্টাইনে রেখে নিশ্চিত হয়েছে যে এই লোকটি করোনা মুক্ত। তারপরই তারা বাইরে যেতে দিয়েছে। আমরা যাদেরকে নিয়ে এসেছিলাম তাদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পেরেছিলাম। এমনকি খেয়াল করে দেখবেন, ভারত কিন্তু আমাদের কিছু নাগরিককে উহান থেকে ভারতে নিয়ে গেছে। চীনে একবার কোয়ারেন্টাইন হয়েছে, ভারতে আরেকবার হয়েছে। তারপর তারা বাংলাদেশে এসেছে। ইতালিতে দেখেন ৬ লক্ষ বাংলাদেশী থাকে। তাদের মধ্যে ব্যাপক মেলামেশা। সেখানে বাংলাদেশের জেলা ভিত্তিক, উপজেলা ভিত্তিক, থানা ভিত্তিক সভা-সমিতি আছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট আছে। স্থানীয়দের সাথে তাদের মেলামেশাও খুব বেশি। ইতালি সরকার যে কাজটি একদমই ভালো করেনি তা হলো তারা কোনো মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করে পাঠায়নি। বিশ্বে প্রথম যে বাংলাদেশী ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি হচ্ছেন একজন ইতালিয়ান পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী, যিনি যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হয়েছিলেন। তিনি ইতালি থেকে যুক্তরাজ্যে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে ইতালি থেকে কোয়ারেন্টাইন ছাড়া মানুষ যে শুধু বাংলাদেশে এসেছে তাই না, তারা ইউরোপের অন্যান্য দেশেও গেছে। ফলে এই দায়িত্ব কিন্তু ইতালিকে নিতে হবে। উহান থেকে এই ভাইরাস যখন ইতালিতে ছড়িয়ে পড়লো তখন দলে দলে ইতালি থেকে প্রবাসীরা আসা শুরু করলো। তখন একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল যে যদি বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করা হয় তাহলে কোথায় রাখবেন এতগুলো লোক? দ্বিতীয় সমস্যা ছিল এই লোকগুলো কিন্তু অবাধ্য ছিল। ফলে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে। কোয়ারেন্টাইন কিন্তু এ ধরনের মহামারী মোকাবেলার একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত পদ্ধতি না। এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে আমি যদি সেটা না মানি তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনে জনে তো এটা মানানো যাবে না। এখন আমার মনে হয় যা হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে, সদ্য চীনের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনগুলোকে মোকবেলা করতে হবে। নইলে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।

ধূমকেতু: অনেক হাসপাতাল জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার রোগীদের চিকিৎসা করছে না করোনার ভয়ে। করোনা আক্রান্ত হওয়া তো আর কোনো অপরাধ নয়। সব ধরনের রোগীরা যাতে চিকিৎসা পান, আবার ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয়টিও অবশ্যই আছে। এ ক্ষেত্রে আপনার মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বক্তব্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: দেখুন ডাক্তার হিসেবে যদি আমি ডাক্তারদের মানসিকতাটা দেখি তাহলে আমি দুটি জিনিস দেখি। একটা হলো সেবা দাতা এবং সেবা গ্রহীতা হিসেবে চিকিৎসক এবং রোগীর যে সম্পর্ক, সেটা বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে একটা অবনতির জায়গায় গেছে। হয়তো আমাদেরও সমস্যা আছে। মানুষতো নিজের দোষটা অতো ভালো বুঝতে পারে না। কিন্তু ডাক্তারকে মারা হয়েছে, হাসপাতাল ভাঙা হয়েছে। সেটাও কিন্তু ভালো হয়নি। আমি কাউকে একচেটিয়াভাবে দায়ী করছি না। তবে একটাতো গ্যাপ কোথাও তৈরি হয়েছে এটাতো সত্য। আরেকটি জিনিস দেখুন, শুধু অর্থের জন্য মানুষকে কিন্তু আপনি যুদ্ধে নামাতে পারবেন না। যদি মুক্তিযুদ্ধের উদাহরণ টানি তাহলে দেখবো একাত্তর সালে কাউকে কি পয়সা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করাতে পেরেছেন? না। পুরো জাতি একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এখানে দুটি বিষয় আছে। ডাক্তারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। বুঝতে হবে তিনিও মানুষ। তার বাসায় পরিবার আছে। তাকে যদি আপনি নিরাপত্তা না দেন তাহলে তিনি কী নিয়ে যুদ্ধে যাবেন? আপনি যদি পুলিশকে বলেন বন্দুক ছাড়া, পিস্তল ছাড়া ছিনতাইকারীকে ধরে নিয়ে আসতে। এটা কি সম্ভব হবে? ডাক্তারকে যদি যুদ্ধে নামাতে চান ডাক্তার যুদ্ধে যাবে। কিন্তু ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দার হয়ে কোনো বুদ্ধিমান লোক কিন্তু যাবে না। দ্বিতীয় বিষয় হলো- ডাক্তারকে তার মর্যাদাবোধটা দিতে হবে। একজন যখন একটা কাজ করবে তখন তাকে তার সম্মানটুকু দিতে হবে। আপনি আজকে উহানের দিকে তাকিয়ে দেখেন। আমরা যতটুকু জানি চীনে একটা পর্যায় এসেছিল যখন চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু আজকে যখন উহান বিজয় উদযাপন করছে তখন কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ডাক্তারকে স্যালুট করছে। তারা কিন্তু বলছে না অমুক দিন দু-চারজন ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি। বরং তারা ডাক্তারের সার্বিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাদেরকে গৌরবান্বিত করছে। তাদের যে এতো হাজার লোক মারা গেছে সে জন্য ডাক্তারকে ব্লেম না করে আরো যে বহু লক্ষ লোক মারা যায়নি সে জন্য ডাক্তারদের প্রশংসা করছে। এ বিষয়টি কিন্তু আমাদের শিখতে হবে। যেমন, ডেঙ্গুর সময় চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসক মারা গেছেন। আমি অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি কেউ কি বলতে পারবেন একজন চিকিৎসকের নাম? বলতে পারেননি। আমরা যদি সে সময় ডেঙ্গুর চিকিৎসা করতে গিয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মূল্যায়ন করতাম তাহলে আজকে আরেকজন চিকিৎসক মনে করতেন আমার নিরাপত্তা আছে। আমি মরে গেলে বীরের মর্যাদা পাবো। আমার মনে হয় এই বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করতে হবে।

তবে শুধু হাসপাতালের চিকিৎসকই মানুষ বাঁচাতে পারবে না। মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। এই লক ডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে পুলিশকে। আমি প্রশংসা করি আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির। তারা মুদি দোকান আর ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ রেখেছেন। আমার পরিচিত একটি মসজিদ কমিটি জামাতে নামাজ পড়া বন্ধ করেছেন। আমি তাদের প্রশংসা করতে চাই। তাই আমার মনে হয় যে, প্রত্যেকের কিন্তু একই অবদান আছে। চিকিৎসক একজন অসুস্থ রোগীকে বাঁচান বা বাঁচাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউ যাতে অসুস্থ না হন সে প্রক্রিয়ায় অনেকের অবদান আছে। তাই আমি মনে করি সবার প্রচেষ্টাতেই আমরা সুন্দরভাবে এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো। তবে একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি আশা করবো ডেঙ্গুর সময় আমরা যা করিনি, করোনায় যেন সেই কাজটির পুনরাবৃত্তি না করি।

ধূমকেতু: করোনার চিকিৎসায় দুয়েকটি ওষুধের নাম গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যেগুলো অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ওষুধ। দু-একটি দেশ স্বীকৃতিও দিয়েছে এসব ওষুধ। আক্রান্ত ব্যক্তি সুফল পাচ্ছে বলেও বলা হচ্ছে।

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: আমি যতোটুকু জানি ইউএসএফডিএ এই চিকিৎসাটাকে অনুমোদন দিয়েছে। এটা এনথ্রোমাইসিন এবং ক্লোরোফিলের কম্বিনেশন। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এটা স্বীকৃতি পেয়েছে। সামনে হয়তো আরো ভালো ওষুধ আসবে। আরেকটি চীনা ওষুধ যেটা জাপানিরা চীনে ব্যবহার করেছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে রোগ প্রতিরোধের জন্য এসব ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। একমাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এসব ওষুধ নেয়া যাবে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *