প্রচ্ছদ

বিলম্বিত রায় ও খরচের ভয়ে শ্রমিকরা আদালতে যেতে চায় না


রায় পেতে বিলম্ব ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে শ্রমিকরা আদালতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যে কারণে শ্রমিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যত দ্রুত সম্ভব শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে শক্তিশালী করার জরুরি।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ‘জাতিসংঘের নীতি কাঠামোর আলোকে পোশাক খাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মজিবুল হক চুন্নু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যখন কোনো রায় শ্রম আদালতে শ্রমিকদের পক্ষে যায়, তখন অনেক কারখানা মালিক শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেখানে মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতি নিযুক্ত হন। রিট মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতের আইনজীবী নিয়োগ করতে একজন শ্রমিকের অনেক অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন হয়। রায় পেতে বিলম্ব ও শ্রমিকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে শ্রমিকরা আদালতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যদি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মতো কাজ করে, তাহলে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রায় পেতে সক্ষম হবেন, যা তাদের জন্য সহায়ক হবে। 
ক্রিশ্চিয়ান এইড ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন শ্রমসচিব মো. এহছানে এলাহী, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এখনও একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। প্রায় ১৭ শতাংশ শ্রমিক বলছেন, তারা কারখানার মধ্যে মৌখিক বা শারীরিক হয়রানির মুখোমুখি হন। যার জন্য সুপারভাইজার ও লাইন ম্যানেজাররা দায়ী। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে তারা সহকর্মীদের দ্বারা হেনস্তা হন। এ সময় বক্তারা পোশাকখাতে শ্রম ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চিত্তাকর্ষক অগ্রযাত্রা, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লাখো মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং অর্থনীতিতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার দাবি করেন, পোশাকশিল্পের মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়ন মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নন। তারা ট্রেড ইউনিয়নকে অ্যালার্জি মনে করেন। পোশাকশিল্পের অনেক মালিক গণমাধ্যম কিংবা সভা-সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে অবস্থান নেন। তবে তারা ট্রেড ইউনিয়নকে ভয় পান।
এই শ্রমিকনেতা বলেন, পোশাকশিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। কারখানার অনেক মালিক দায়িত্ব-কর্তব্য বোঝেন না। অনেকে আবার তা এড়িয়ে যান। শ্রমিকদের অনেকে দায়িত্ব–কর্তব্য সম্পর্কে অবগত নন। আবার শ্রমিক সংগঠনেরও ঘাটতি রয়েছে।
শ্রমসচিব মো. এহসান-ই-এলাহী বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ শিগগিরই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১৩৮ অনুমোদন করতে যাচ্ছে। গত বছর, ইইউ ও জার্মানি রপ্তানিমুখী পোশাক ও চামড়া খাতের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য বাংলাদেশকে এক হাজার ১০০ কোটির বেশি  টাকা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য রয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ৭২ হাজার শ্রমিকের মধ্যে তিন হাজার টাকা করে বিতরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *