অপরাধ ও দূনীতি

এক বছরে ওষুধ উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ৪৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল

গত এক বছরে ৪৭টি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছে সাত কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে ৯২টি।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাইমুল গোলদার এসব তথ্য জানান।
এর আগে শনিবার নকল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার মিটফোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসি ও গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দসহ তিনজনকে আটক করে ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। আটকরা হলেন- মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ফার্মেসির ফয়সাল আহমেদ (৩২), লোকনাথ ড্রাগের সুমন চন্দ্র মল্লিক (২৭) ও রাফসান ফার্মেসির মো. লিটন গাজী (৩২)। আজ এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমপি।
সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসনের এই উপ-পরিচালক নাইমুল গোলদার বলেন, অভিযানে জব্দ ওষুধের মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে নিবন্ধনবিহীন, নিষিদ্ধ ও ভেজাল ওষুধ। এর মাঝে একটি ওষুধ হচ্ছে পেড়িএকটিন, যা অনেক আগেই ব্যান করা হয়েছে।
মানুষ কীভাবে ভেজাল ওষুধ চিনতে পারবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করছি কিন্তু সাধারণ মানুষ যে বিষয়টি করতে পারে তা হলো নিবন্ধন করা সব ওষুধের তালিকা আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, সেখান থেকে জনগণ এ বিষয়ে জানতে পারে। আর জনগণকে অবশ্যই ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করা উচিত। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সার্টিফিকেট। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয় সে কোম্পানির ইনভয়েস ওষুধ ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে ফার্মেসিগুলো চাপের মুখে থাকবে। এতে নকল ওষুধের চাহিদা তারা দেবে না।
নকল ওষুধ সেবনে মানুষের কী ক্ষতি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নকল ওষুধ সেবন করলে মূল সমস্যা হয় লিভার ও কিডনিতে। সে কারণে বাংলাদেশে লিভার ও কিডনিজনিত রোগী বাড়ছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, এ বেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করতে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার (দক্ষিণ) মাহবুব আলম বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনগণ যে এসব ভুয়া ওষুধ খেয়ে প্রতারিত হচ্ছে, সেখানে জনগণেরও একটি দায়বদ্ধতা আছে। যেসব দোকানে ওষুধ বিক্রয় করা হয় সেসব দোকানের ওষুধের নিবন্ধন নম্বর ও বৈধ ওষুধের তালিকা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া থাকে। ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় এসব তালিকা দেখার অধিকার সাধারণ ক্রেতাদের আছে। নকল ও ভুয়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে ফার্মেসিতে গিয়ে ক্রেতাদের অবশ্যই তালিকাগুলো দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, যারা নকল ওষুধ বিক্রি ও উৎপাদন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সামনে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবো। ইউনানি ও হোমিওপ্যাথির লাইসেন্স নিয়ে যারা অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে তাদের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সরবরাহকারী নাকি প্রস্তুতকারী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিটফোর্ড এলাকায় তারা পাইকারি ওষুধের ব্যবসা করেন। সেখান থেকে তারা সারাদেশে ভেজাল ওষুধ সাপ্লাই করে থাকেন। যারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তাদেরও তালিকা করছি। আমাদের তালিকা দিন দিন বাড়ছে। সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী সবাইকে আমরা তালিকাবদ্ধ করছি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকালের অভিযানে আমরা ১৬টি আইটেম জব্দ করেছি। এই ১৬টি অবৈধ ওষুধের সরবরাহকারী যারা তাদের আমরা গ্রেফতার করেছি। উৎপাদনকারীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন, তবে তারা আমাদের আওতার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *