নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ক্রমাগত লোকসানে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি ২৬টি পাটকলের মধ্যে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে পাঁচটি পাটকল। বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এই পাটকলগুলো। দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এই পাটকলগুলো পরিচালনা করবে। পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিলস, বাংলাদেশ জুট মিলস, হাফিজ জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস ও কেএফডি জুট মিলস।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সোনালি আঁশ পাটের সুদিন আবার ফিরিয়ে আনতেই বন্ধ পাটকলগুলো বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে ইজারার জন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে দেশি প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, রয়েছে বিদেশিও। আগামী ২০ বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে চুক্তির সময়সীমা বাড়ানো যাবে।

উল্লেখ্য, সরকারের বন্ধ পাটকলগুলোর পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের এই বোঝা বইতে না পেরে গত বছরের ১ জুলাই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্হায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা-অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানো হয়। এরপর চলতি বছর এপ্রিলে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি) সরকারি পাটগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এরপর ৫৯টি প্রস্তাবনা থেকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সূত্র বলেছে, চলতি মাসেই বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে দুটি পাটকলের ইজারার জন্য চুক্তি সই করেছে দুটি কোম্পানি। তারা ২৪ মাসের অগ্রিম ভাড়া বাবদ বড় অঙ্কের সিকিউরিটি মানি জমা দিয়েছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হবে। এরপরই তাদের পাটকলগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই পাঁচটি পাটকলের মধ্যে সবচেয়ে বড় খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস।

এটি ইজারা পেয়েছে মিমো জুট লিমিটেড। নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলসের ইজারা পেয়েছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। চট্টগ্রামের দুটি পাটকল রয়েছে। কেএফডি জুট মিলস ও হাফিজ জুট মিলস। এ দুটি পাটকল ইজারা পেয়েছে যথাক্রমে ইউনিটেক্স কম্পোজিট ও সাদ মুসা গ্রুপ। আর সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস ইজারা পেয়েছে যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। ইজারার শর্ত অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানগুলো পাটপণ্য ছাড়া কারখানায় অন্য কোনো পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না। এছাড়া, তারা শুধু কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি ও কারখানা প্রাঙ্গণ সংলগ্ন জমি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু পাটকলের ভেতরে খোলা অন্য জায়গা ব্যবহার করতে পারবে না। সেই সঙ্গে পাটকলের সম্পত্তি বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান ইজারা বাতিল করতে চাইলে অবশ্যই বিজেএমসিকে অন্তত ছয় মাস আগে জানাতে হবে। বিজেএমসি সূত্র জানিয়েছে, সিকিউরিটি মানি দেওয়ার পর চুক্তি হয়ে গেলে সেই প্রতিষ্ঠানকে পাটকল বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তখন তারা কারখানায় উত্পাদনে যেতে পারবে। তবে আগামী মাসের মধ্যেই তাদের চুক্তি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পাট ও বস্ত্রসচিব আবদুর রউফ গতকাল বলেন, আমরা চাই, বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু হোক। এজন্য বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, আগামী মাসের মধ্যে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পাটকলগুলো বন্ধ ছিল। এতে যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা পড়ে গেছে। এসব ঠিকঠাক করতে-তো কিছু সময় লাগবে। আশা করছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে কারখানাগুলো উৎপাদনে যাবে। দেশে বেসরকারি পাটকলগুলো লাভজনক হলেও সরকারি পাটকলগুলো কেন পারল না—এ প্রশ্নের জবাবে পাট ও বস্ত্রসচিব বলেন, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি পাটকলে একজন শ্রমিক তার কর্মঘণ্টার বিপরীতে কী কী কাজ করবে তা নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু একটি সরকারি পাটকলে কি তা সম্ভব। এছাড়া ঠিকমতো কাজ না করেও বেতন নেওয়াসহ নানা অভিযোগতো রয়েছেই। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কাজ করে। যেটা বেসরকারি কল-কারখানায় হয় না। তিনি বলেন, এখন পাঁচটি পাটকল বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকি পাটকলগুলোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন:

হাওর, দ্বীপ ও চরে কর্মরত ব্যাংকাররা পাবেন বাড়তি ভাতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *