কৃষি-মৎস্য

ধানের চেয়ে দাম বেশি খড়ের ।। খুশি কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে খড়ের দাম বাড়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তারা জানিয়েছেন, আধা কেজি ওজনের একেটি খড়ের আঁটি ৬ থেকে ৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা। সেই জমি থেকে খড় পাওয়া যায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ আঁটি।

গবাদি পশুর পালন বেড়ে যাওয়ায় খড়ের দামও বেড়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ী গ্রামের কৃষক আহমেদ আলী (৬০) বলেন, ‘ধানের চেয়ে এখন খড়ের কদর বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর আগে অনেককে খড় বিনামূল্যে দিয়েছিলাম। এখন কেউ খড় চাইলে কষ্ট হয়। ধান দিতে রাজি কিন্তু খড় দিতে রাজি না। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষে লাভবান হচ্ছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে এ বছর ২ লাখ ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। ধান উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন। কৃষকরা খড়ের আঁটি পেয়েছেন প্রায় ১৮৪ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজারটি।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে গরু ও মহিষ রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ। প্রতিটি গরুকে গড়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ আঁটি খড় খাবার হিসেবে দিতে হয় এবং মহিষকে দিতে হয় ৯ থেকে ১০ আঁটি। বিশেষ করে দুধেল গাভির জন্য খড় খুবই উপকারী। এজন্য কৃষকরা বাজার থেকে কেনা গো-খাদ্যের চেয়ে ধানের খড়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা গ্রামের কৃষক প্রেমানন্দ রায় (৬৩) বলেন, ‘এ বছর ১২ বিঘা জমি থেকে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার খড়ের আঁটি পেয়েছি। ৫টি গরুর জন্য ৫ হাজার আঁটি রেখে দিয়ে বাকি সাড়ে ৬ হাজার আঁটি প্রতি পিচ ৬ টাকা দরে বিক্রি করেছি। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা ধান চাষে লাভবান হচ্ছি।’

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দৈলজোড় গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম (৫৮) বলেন, ‘ধান চাষ করে তেমন লাভ না হলেও খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুশি। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।’

‘এ বছর ৯ বিঘা জমির খড় বিক্রি করে পেয়েছি ৫৭ হাজার টাকা। আমাদের কাছে এখন খড়ের কদর অনেক বেশি,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের গরু পালনকারী মেহের আলী (৫৫) বলেন, ‘খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ। বাজারে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। আমার ৬টি গরু আছে। ১টি দুধেল গাভি। প্রতিদিন ৩২-৩৬টি আঁটি খড় লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে আশেপাশে খালি জমি ছিল। ঘাসের অভাব ছিল না। এখন জমি পতিত থাকে না। তাই ঘাসের জমির অভাব।’

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘প্রায় বিঘা জমি থেকে ২ হাজার ৮০০টি খড়ের আঁটি পেয়েছি। ৬টি গরু আছে। তাই ৮ হাজার খড়ের আঁটি মজুদ রেখেছি। আগের চেয়ে গরু ও দুধের দামও বেড়েছে।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, ‘কৃষকরা এখন ধানের খড়ের প্রতি খুবই যত্নশীল হয়েছেন। অনেকে খড় বিক্রি করেই ধান চাষের খরচ তুলছেন। এখন তারা ধান চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।’

আরো পড়ুন:

কৃষকের জীবনকে সহজ করে দিলো ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টর’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *