মাতৃভূমি

‘দক্ষিণে মারা গেল পরদিন উত্তরে, কারণটা কী?’- প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাজধানীতে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িচাপায় দুজন নিহতের ঘটনায় দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডিতে নির্মাণাধীন জয়ীতা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ছাত্র মারা গেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এই রহস্য বুঝলাম না, দক্ষিণে মারা গেল এর পরের দিন উত্তরে মারা গেল কেন! এর কারণটা কী? এই কারণটা এবং এর জন্য কারা দায়ী খুঁজে বের করতে হবে। যখন ময়লার গাড়ি যাচ্ছিল তখন তার সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে যাবে কেন, সেটাও দেখতে হবে। গাড়ি যে চালাচ্ছিল, এই গাড়ি চালানোর মতো দক্ষতা তার আছে কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে। উভয় দিকে দায়িত্বশীলতা কার কতটুকু আছে সেটা আমাদের দেখতে হবে।

তিনি বলেন, আজ আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতা যুদ্ধের পরে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায় করে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। ১৯৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পাবে। আজকের শিশুরাই হবে তখনকার কর্ণধার। কাজে সেভাবেই নিজেদের তৈরি করতে হবে। শিশুদের লেখা-পড়া করতে হবে। অভিভাবকের কথা মানতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা কথা সবার জন্য বলতে চাই—রাস্তাঘাটে চলার সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। যেখান-সেখান থেকে রাস্তা পার হতে গেলে দুর্ঘটনা হবেই। একটা চলমান গাড়ি চট করে ব্রেক করতে পারে না, ব্রেক কষতে সময় লাগে। রাস্তা পারাপারের জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে। হঠাৎ করে দৌড় দেবে তারপর অ্যাকসিডেন্ট হবে আর অ্যাকসিডেন্ট হলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া-পোড়ানো এটা কী ধরনের কথা!

তিনি আরও বলেন, অ্যাক্সিডেন্টে একটা লোক মারা গেছে, তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে, তার সেবা না করে লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়ল গাড়ি ভাঙতে আর আগুন দিতে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সমগ্র জাতির কাছে প্রশ্ন করছি, আগুন দেওয়া শুরু হলো ওই গাড়িতে কি যাত্রী নেই? শিশু নেই? ছাত্র-ছাত্রী নেই? ওই আগুনে যারা আহত হবে বা মারাও যেতে পারে তার দায় কে নেবে? একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হলো, একটা মানুষ মারা গেল বলে আরও ১৫টা গাড়ি ভাঙা এবং আগুন দেওয়ার ফলে গাড়ি যাত্রী-চালক যারা আহত হয় অথবা কেউ নিহত হয় সে দায়িত্ব কারা নেবে? স্বাভাবিকভাবে যারা ভাঙচুর করছে তাদের ওপর বর্তায়। তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি বলবো আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।

চালকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে। জনসংখ্যা অনেক বেশি আমাদের স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে গেলে সঠিক প্রশিক্ষিত হতে হবে। আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে প্রশিক্ষণের জন্য এখন উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ট্রেনিং দিচ্ছি। আমাদের যতগুলো কারিগরি ট্রেনিং সেন্টার আছে সেখানে আমরা ড্রাইভিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের প্রচুর চালক দরকার। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে যত সাবলম্বী হচ্ছে, গাড়ি কেনারও তাদের ক্ষমতা বাড়ছে। পাবলিক বাস সরকারি আছে, বেসরকারি আছে। সরকারি বাস যারা চালায় তারা সবাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে। বেসরকারি বাস যারা চালায় অবশ্যই তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একটা মানুষ একটানা কয় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারে সেটাও দেখতে। তাকে বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আমরা অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলাম, সংসদ টেলিভিশন দিয়ে দিয়েছিলাম শিক্ষার জন্য। শিক্ষাটা যাতে চালু থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। এখন সব স্কুল-কলেজ খুলে গেছে। সবাইকে এখন পড়াশোনা করতে হবে। যার যার স্কুলে ফিরে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাস একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। নতুন আরেকটা ওয়েভ আসছে। যে কোনো সময় এটা যদি বিস্তার লাভ করে তাহলে আবার স্কুল সব বন্ধ হয়ে যাবে। কাজে যেখানে সময় পাওয়া যাচ্ছে, সবাইকে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে ‍গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। গত ১২ বছরে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক অগ্রগতি লাভ করেছি। আজ মানুষ অনেক উন্নত জীবন পাচ্ছে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশে অনেক তফাৎ। এখনকার বাংলাদেশে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেটা দেখছে চির দিন কিন্তু এটা ছিল না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙা ছাত্রদের কাজ না। এটা করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান এবং লেখাপড়া করুন।

তিনি আরও বলেন, যারা দোষী অবশ্যই তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সতর্ক এ ব্যাপারে। সব জায়গায় ভিডিও ফুটেজ আছে, অপরাধ যে করবে তাকে ধরা ফেলা কঠিন হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যারা গাড়ি ভাঙচুর করবে, আগুন দেবে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে আর ওই গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা আগুনে পোড়ে তার জন্যও কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমাদের দেশে এখন যে উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি, সেটা ধরে রাখতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের শিশুরা সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলবে আমি সেটাই প্রত্যাশা করি।

আরো পড়ুন:

আজ থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে আপিল বিভাগের বিচারকাজ শুরু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *