কৃষি-মৎস্য

প্রথমবারের মতো ভোলায় হাইব্রিড আমন চাষে এলো সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: ভোলায় প্রথমবারের মত ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের আমন ধান চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। ক্ষেতে রোগ বালাই, পোকা-পাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় অল্প খরচে অধিক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে অন্যান্য ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এ জাতের ধান শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চালে ফলন পেয়েছি ৪ দশমিক ৭ মেট্রিকটন ও ধানে ৭ দশমিক ২৫ মেট্রিকটন। এছাড়া মোট ৭০ হেক্টর জমি থেকে নতুন এ জাতের ধান থেকে চাল পাওয়া গেছে ৩২৯ মেট্রিকটন। আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবেন তারা।

সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের ৫ একর জমিতে প্রথমবারের মত ব্রি হাইব্রিড ৬ জাতের ধান চাষ করেন মো. ইয়ানুর রহমান বিপ্লব নামে এক কৃষক। আর প্রথমবারেই ব্রি হাইব্রিড ৬ জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তার সফলতা দেখে ওই গ্রামের অনেক কৃষক আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন।

কৃষক ইয়ানুর রহমান বিপ্লব জানান, তিনি প্রতি বছর আমন মৌসুমে স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ করেন। তাতে বিঘা প্রতি জমিতে ১০ মণ ধান উৎপাদন হতো, কিন্তু এ বছর তিনি ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় ২৪ মণ ধান পেয়েছেন। এছাড়াও হেক্টর প্রতি ৭০/৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ধান পেয়েছেন ১৬৮ মণ। আর খরচ বাদে হেক্টর প্রতি তার ৬৫/৭০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। ক্ষেতে রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় সার-কীটনাশকও কম লাগে। এতে কম খরচ ও পরিশ্রমে অধিক ধান উৎপাদন হওয়ায় অন্যান্য ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন তিনি। এছাড়াও আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এ জাতের ধান চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভোলার সাত উপজেলায় আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে থাকলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৫ হেক্টর জমি বেশি। এরমধ্যে ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ হয়েছে ৭০, উচ্চ সফলশীল উফশী জাতের হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৫, ও স্থানীয় জাতের হয়েছে ২২ হাজার ৯৪০ হেক্টর।

পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘার হাওলা গ্রামের কৃষক মো. মোছলে উদ্দিন জানান, ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করতে যেমন খরচ কম তেমনি পরিশ্রমও কম। এ ক্ষেতে সাধারণ ধান ক্ষেতের চেয়ে তুলামূলক রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অনেক কম।

একই এলাকার কৃষক মো. আবু কালাম ও রফিক মিয়া জানান, তারা গ্রামের কৃষকদের কাছে শুনেছেন ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করলে নাকি কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী বছর জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের সহযোগিতায় এবছর প্রথমবারের মত ভোলা সদর ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক ৭০ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ২০ ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৫০ হেক্টর চাষ হয়।

তিনি আরও জানান, ব্রি হাইব্রিড জাতের ধানে হেক্টর প্রতি ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা ৭.২৫ মেট্রিক টন ও উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধানে হেক্টর প্রতি পাচ্ছেন ৬ মেট্রিকটন। যার কারণে আগামীতে অনেক কৃষক ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

আরো পড়ুন:

সৌদি খেজুর চাষী মোতালেবর বৎসরিক আয় ৫০ লাখ টাকা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *