প্রচ্ছদ

লাগাম টানতে হবে মোটরসাইকেলের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৭১টি। এতে মারা গেছেন ৬২৯ জন। আহত হয়েছেন ১৯৮ জন। ২০২০ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০০৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০৯৭ জন, আহত ৪২৩ জন।

গত এক বছরে দেশে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ মোটরসাইকেল। সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এ নিবন্ধন। লাইসেন্সে লাগাম টানতে না পারলে একদিকে সড়কে যেমন দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা, তেমনি দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে—এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু মামলা দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে না। ঢাকার মতো একটি মেগাসিটিতে কী পরিমাণ ছোট যান চলা উচিত সেটা নিয়ে এখনও নীতিমালা নেই। ঢাকায় কোন যান কতটি থাকা উচিত তা নিয়েও গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে। গণহারে ছোট যানের লাইসেন্স দিয়ে সড়কে মূলত অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন বলছে চলতি ২০২১ সালের জুনে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৫২ জন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন-এর তথ্য বলছে ২০২০ সালে দেশে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ২৩২টি, যার মধ্যে ১ হাজার ১২৭টি ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে তৎপরতা, তা কাজে আসছে বলে মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন রাজধানীতে গড়ে আটশ’টি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলই বেশি। আমি মনে করি এ ধরনের ছোট যানগুলোর রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া একটি কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। রাজধানীতে যে পরিমাণ মোটরসাইকেল আছে, আমার মতে, একটি আদর্শ শহরে এতগুলো থাকা উচিত নয়।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪৪টি বিভিন্ন শ্রেণির মোটরযানের নিবন্ধন দেওয়া হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলই আছে প্রায় ৩৩ লাখ, প্রাইভেটকার ৩ লাখ ৭৪ হাজার।

এক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে কিনা প্রশ্নে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক গোলাম রব্বানী বলেন, বাস-মিনিবাসের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনে কোনও সীমারেখা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও নেই।

বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। যেভাবে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে সেভাবেই চলবে।

মোটরসাইকেল যারা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার প্রবণতা, আইন না মানা ও অদক্ষতার বিষয়টি রয়েছে উল্লেখ করে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, মোটরসাইকেলের সামনে হুট করে কিছু এসে পড়লে কড়া ব্রেক কষতে গিয়েও ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং হয় বলে অনেকে গ্রাম থেকে শহরে এসে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। রাজধানীর সড়ক বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের মোটেও ধারণা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ মোটরসাইকেল আরোহী কিংবা যাত্রীদের হেলমেটগুলোও মানসম্মত নয়। শুধু মামলা এড়াতেই যেন নামমাত্র হেলমেট ব্যবহার করছেন তারা। এতেও আহত-নিহত বাড়ছে।

আরো পড়ুন:

পরিবহন ধর্মঘট, চলছে না বাস || কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *