মাতৃভূমি

সম্প্রীতি সমাবেশে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারকে ৭ প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে ৭টি প্রস্তাব দিয়ে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। এই সমাবেশে একাত্মতা জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক ৭১টি সংগঠন। এসময় হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্প্রীতি সমাবেশ শুরু হয়। সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। সবার কণ্ঠেই ছিল অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মেলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, প্রজন্ম-৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনির তন্ময়, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা, খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশের মহাসচিব উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সভাপতি রেভারেন্ট মার্টিন অধিকারী, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব পি আর বড়ুয়া, ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু সুনান্দ সুপ্রিয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন অরুণ গোস্বামী প্রমুখ।

সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক দর্শন বিনষ্টের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে আমরা উদ্বিগ্ন। যে নিরাপত্তাহীন এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব ধ্বংসের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।’

বক্তরা আরও বলেন, ‘হাজার বছরের সম্প্রীতির সংস্কৃতি ধ্বংস করতে ’৭৫ সালের পর থেকে চলছে পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং আঘাত। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি বারবার যে উত্থান ঘটেছে তা রোধ করা না গেলে দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ভবিষ্যত রক্ষা করা কঠিন হবে। তাই আজ প্রয়োজন প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। একই সঙ্গে সম্প্রীতির পবিত্র বাণী প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়াও অত্যন্ত জরুরি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য বীর শহীদরা আত্মহুতি দিয়েছিলেন। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায় সে জন্য শুভবোধ সম্পন্ন সকলকে একাত্তরের মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সমাবেশে সরকারের কাছে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে অতীতের ঘটনারও দ্রুত বিচার শেষ করতে হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা বন্ধে প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর এবং উপাসনালয় সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয় অন্তর্ভূক্তিরও দাবি জানানো হয়।

বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উস্কানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

সম্প্রীতি সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করে- একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রজন্ম একাত্তর, উদীচী, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (ঢাকা, বাংলাদেশ), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মীলন, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামি জোট, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি এলামনাই এসোসিয়েশন, হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ মোর্চা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চিকিৎসা সহায়ক কমিটি (একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি), বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, ল’ইয়ার্স সম্প্রীতি, মুক্তচিন্তা এবং যুক্তিবাদ চর্চা ফোরাম, ইন্টার রিলিজিয়া হারমনি সোসাইটি, মাইনরিটি রাইটস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু অভিযাত্রিক, স্বাধীনতা সরকারি চাকরিজীবী জাতীয় পরিষদ, বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট, গৌরব ৭১, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সমিতি, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, ইউনিটি ফর ইয়াং জার্নালিস্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, রমনা কালীবাড়ি ও আনন্দময়ী মন্দির কমিটি, প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, পল্লী বাউল সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, নাট্যস্নাতক মঞ্চ, ফার্মাসি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ, বাংলাদেশ বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, গণসাংস্কৃতিক মৈত্রী, স্থপতি পরিষদ, বাংলাদেশ, শিক্ষক সমিতি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, নাট্যকেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমী ফাউন্ডেশন, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, সাউথ এশিয়া স্টাডি সার্কেল, শালুক, লিটল ম্যাগাজিন, মাসিক চিকিৎসক বার্তা, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্স, ৭২ ফাউন্ডেশন, রুটস অফ হিউমেন রাইটস ফাউন্ডেশন, হিউমেন রাইটস ফর এভরিওয়ান, সাউথ এশিয়ান দলিত ফোরাম (বাংলাদেশ চ্যাপটার), বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পরিষদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *