স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যবিধি পালন ও টিকা গ্রহণে অবহেলা করা যাবে না

নিখিল মানখিন, ধূমকেতু ডটকম: করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি পালন ও টিকা গ্রহণে অবহেলা করা যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি বিশ্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। কোনো একটি দেশ বা অঞ্চলের পরিস্থিতির ভিত্তিতে কোনো একটি দেশের করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্তে যাওয়া যাবে না।

স্বাস্থ্যবিধি পালন ও টিকা গ্রহণের বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। কমে গিয়ে হঠাৎ কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় অবনতি হওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। অবহেলা করতে গিয়ে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে নানাভাবে চরম মাশুল দিতে হয়েছে।

একটি সংবাদ সম্মেলনে কোনো দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি বুঝতে কয়েকটি মানদণ্ড ঠিক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে বলা হয়—টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও নতুন রোগী কমতে থাকা, টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেই বক্তব্যের উপর দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ অনেকেই দাবি করে যাচ্ছেন যে, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশে টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও নতুন রোগী হ্রাস অব্যাহত রয়েছে এবং টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে।

কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়টি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া মানদণ্ডটি ইতোমধ্যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক ও প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেই বক্তব্য অনেক আগেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও নতুন রোগী হ্রাস এবং টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে অবস্থান করার পরও অনেক দেশের করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার ঘটনা রয়েছে। দূরে যেতে হবে না। ভারত ও বাংলাদেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া মানদণ্ড অবস্থায় থাকার কয়েক মাসের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে বাংলাদেশে। তাই করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি পালন ও টিকা গ্রহণের বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঝুঁকিমক্ত নয়। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি বিশ্ব পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। কোনো  একটি দেশ বা অঞ্চলের পরিস্থিতির ভিত্তিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্তে যাওয়া যাবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলা যাবে না বলে জানান এ এস এম আলমগীর।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে জানান, গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ও অবনতির খেলা চলছে। বাংলাদেশের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও থামেনি করোনা সংক্রমণ। তিনি বলেন, চীনে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে বেশি সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে সংক্রমিত হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তাই দেশে করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকা অবস্থায় করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবহেলা করা যাবে না।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। টিকা গ্রহণ করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ধূমকেতু ডটকমকে বলেন, করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ব্যাধি। বেড়ে যেতে যেমন বেশি সময় লাগে না, তেমনি হ্রাস পেতেও বেশি সময় লাগে না। কিন্তু দেশের করোনা পরিস্থিতি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কমে গিয়ে হঠাৎ কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় অবনতি হওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। অবহেলা করতে গিয়ে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে নানাভাবে চরম মাশুল দিয়ে হয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি পালন ও টিকা গ্রহণ করতেই হবে।

আরো পড়ুন:

৭ মাস পর ভারত থেকে এলো কোভিশিল্ডের ১০ লাখ ডোজ টিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *