শিক্ষা ও সাহিত্য

দশম শ্রেণির ছাত্রীর শিশুকন্যাকে কোলে নিয়েই ক্লাস করালেন শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনাকালে বিয়ে হওয়া দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী গতকাল রোববার তার তিন মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। ক্লাসে ছাত্রীর মনোযোগে যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য শিশুটিকে কোলে নিয়ে পাঠদান করতে থাকেন সহকারী শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির খ শাখার ইংরেজি ক্লাসে এই ঘটনা ঘটে। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি চাকরিসূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের দাতিয়ারা পৌর এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর শিক্ষকতার বয়স ২১ বছর। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে তিনি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার কারণে গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই শিক্ষার্থী গত বছর ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছর ওই শিক্ষার্থীকে পাশের সুলতানপুর ইউনিয়নে বিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। এক বছর পর ওই শিক্ষার্থীর সন্তানের জন্ম হয়।

বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তারপর ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করি। পঙ্কজ স্যার একজন ভালো শিক্ষক।

দীর্ঘ দেড় বছর পর কোলের তিন মাস বয়সী মেয়েশিশুকে নিয়ে গতকাল সকালে নিজের বিদ্যালয়ে যায় ছাত্রীটি। মেয়েকে কোলে নিয়ে ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছিল তার। এ সময় সহকারী শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি এগিয়ে এসে ছাত্রীর সন্তানকে নিজের কোলে নিয়ে পড়ানো চালিয়ে যেতে থাকেন। শিশুটি একপর্যায়ে কোলেই ঘুমিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও ওই শিশুর মায়ের মুঠোফোনে এই দৃশ্য ফ্রেমবন্দী হয়। এরপর এই ছবি ফেসবুকে পোস্ট হলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। যারা বিদ্যালয়ে আসছে না, তাদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। ওই ছাত্রীর বাড়িতেও খবর পাঠানো হয়। বিদ্যালয় খোলার পর গতকালই মেয়েটি প্রথম স্কুলে আসে। তার বিয়ের বিষয়টি আমরা জানতাম না। ক্লাসে ওই শিক্ষার্থীর কোলে এক ফুটফুটে শিশুকে দেখতে পাই। পরে এগিয়ে গিয়ে শিশুটিকে কোলে নিয়েছি। কোলে নেওয়ার পর শিশুটি ঘুমিয়ে যায়। ওই অবস্থায় ক্লাস শেষ করি।’

এই শিক্ষক বলেন, ‘মেয়েটি বিয়ের পরও বিদ্যালয়ে এসেছে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। এখন আমাদের সহযোগিতা পেলে মেয়েটি এগিয়ে যাবে। শিশুটিকে কোলে নিয়েছিলাম, যাতে মেয়েটি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে পারে। ছবিটি কীভাবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, জানি না। কে কীভাবে নেবেন, তাও জানি না।’

চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইমরুল হাসনাত চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তারপর ছবি সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করি। পঙ্কজ স্যার একজন ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের প্রতি স্যার অনেক দায়িত্ববান।’

আরো পড়ুন:

এ মাসে খুলছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *