প্রচ্ছদ

তালেবানের ক্ষমতা দখলের কারণ জানালেন সাবেক রাষ্ট্রদূত

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: কুচকাওয়াজের আগে সাঁজোয়া যানে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার উদ্‌যাপন করতে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারে গতকাল কুচকাওয়াজের আয়োজন করে তালেবান বাহিনী।

আফগানিস্তানে প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত ছিলেন রয়া রাহমানি। যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। গত জুলাইয়ে তিনি এই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন । আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় তিনি ভীত; তবে তিনি বিস্মিত নন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তালেবানের এই ক্ষমতা দখলের ঘটনায় রাহমানি দায় চাপিয়েছেন সাবেক আফগান সরকারের ওপর। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের দুর্নীতি তালেবানের বিজয়ের পথকে সহজ করে দিয়েছে।

রয়া রাহমানি এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তালেবানের উত্থান এই এলাকার ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ‘ দ্রুত তালেবানের আফগানিস্তান দখলের ঘটনায় একজন আফগান হিসেবে আমি অবাক হইনি।’ এ জন্য তিনি আফগানিস্তানের নেতৃত্বের শূন্যতাকে দায়ী করেছেন।

রয়া রাহমানি যেমন বিস্মিত নন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এটা স্বীকার করেছেন, তিনি এবং তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটা জানতেন যে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে আফগান সরকারের পতন হতে পারে।

কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের এটা ধারণা ছিল না, আফগান সরকারের পতন এত দ্রুত হবে। মার্কিন প্রশাসন এই ভুল হিসাব না কষলে কাবুলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আর ভুল হিসেব কষায় কাবুল থেকে মার্কিন এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সরিয়ে নিয়ে ঝক্কির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। কাবুল বিমানবন্দরের পাশে ইসলামিক স্টেট খোরসান প্রভিন্সের (আইএস-কে) বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা নিহত এবং ১৭০ জনের বেশি আফগান নিহত হয়েছেন।

আফগান সরকারের এই পতনের পেছনের কারণ হিসেবে বাইডেন বলেছিলেন, নিজ দেশকে রক্ষায় সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ করার আগ্রহ কম ছিল। তবে রয়া রাহমানি এ বিষয়কে ভিন্নভাবে দেখেন। তিনি বলেন, এটা আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর বিষয় নয় যে তারা তাদের স্বাধীনতা এবং দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য লড়াই করেনি। এটা আফগানিস্তান সরকারের নেতৃত্বের সংকট। এই সরকারের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁরা মূলত আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে এই দুর্নীতির বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।

এ ছাড়া আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির বিষয়টিকে সামনে এনেছেন রয়া রাহমানি। তিনি বলেন, তাঁর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছিল বেশ হতাশার এবং লজ্জার।

তবে দেশ ছাড়ার পেছনে আশরাফ গনির একটি ব্যাখ্যা ছিল। গতকাল বুধবার তিনি বলেন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে তিনি দেশ ছেড়েছেন। এ ছাড়া সরকারি কোষাগার থেকে লাখো মার্কিন ডলার চুরির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কাবুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল আমার জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত।’

আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় আসা নিয়ে যে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে, তা নিয়েও কথা বলেছেন রাহমানি। তিনি বলেন, তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাকিস্তানের সঙ্গে। ফলে, ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো সমঝোতার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে পাকিস্তান। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, এক নতুন পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ভারত, চীন, তুরস্ক ও এর আশপাশের দেশগুলোর ওপর এই ক্ষমতার পালাবদলের প্রভাব পড়বে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *