স্বাস্থ্য

ঘুরলো হবিগঞ্জের হাজারো পরিবারের ভাগ্য

ধূমকেতু ডেস্ক : দিন নেই রাত নেই। সবাই এখন কাজে ব্যতিব্যস্ত। অথচ একটা সময় ছিলো যখন সবাই বেকার সময় কাটাতো। কিভাবে তারা দিন কাটাবেন সেই দুশ্চিন্তায় কাটতো তাদের জীবন।
কিন্তু সে সময় আর নেই। বলছি হবিগঞ্জের মাধবপুরে দক্ষিণ অংশের কয়েকটির গ্রামের হাজারো অধিবাসীর কথা।

এখানে এখন দিন-রাত একাকার। বৈদ্যুতিক লুমের শিল্প উৎপাদনে কাটে গ্রামবাসীর দিনমান। মেশিনের চাকতি বদলে দিয়েছে হাজারো পরিবারের ভাগ্যের চাকা। কয়েক মাস আগেও যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তাদের এখন সুদিন, তারা এখন সচ্ছল।

এই সচ্ছলতার পেছনে কাজ করেছেন একজন ‘মুকুটহীন’ বাদশা। দেশের অন্যতম বড় শিল্পপরিবার বাদশা গ্রুপের মালিক বাদশা মিয়া এখানে গড়ে তুলেছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিশ্বমানের বস্ত্র কারখানা ‘পাইওনিয়ার ডেনিম’।

জারা, জেসিপেনিসহ দুনিয়ার বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের ডেনিমের কাপড় উৎপাদন হয় এই কারখানাটিতে। ইউরোপ-আমেরিকার প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতিতে গড়ে তোলা কারখানাটি থেকে মাসে ৪ কোটি গজ ডেনিম বা জিনস কাপড় উৎপাদন হয় এখন।

এই উৎপাদন এ বছরই দ্বিগুণ করার কথা জানালেন বাদশা মিয়া। আরও দুই পর্যায়ে উৎপাদন তিনগুণে উন্নীত করার পরিকল্পনা জানান তিনি। এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।

১৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে সরাসরি দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বেশিরভাগ স্থানীয়।

গত ৫ বছরে বস্ত্র খাতে এরকম নতুন বিনিয়োগ হয়েছে ছয় হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। এর বাইরে অনেক পুরনো মিল বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছে।

বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে অর্থাৎ ২০১৪ থেকে বিদায়ী ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৪টি নতুন মিল উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে ১৯টি স্পিনিং (সুতা উৎপাদন), ২৩টি ফেব্রিক্স (কাপড় উৎপাদন) ও ডায়িং বা কাপড় রঙ করার মিল স্থাপন হয়েছে ২টি।

একাধিক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা এ দেশে বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ করছেন। এখাতে এরকম অনেক বিদেশি বিনিয়োগ এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বস্ত্র খাতে বিনিয়োগে বড় এই উল্লম্ম্ফন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের সুযোগে বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ এত বেশি হারে বেড়েছে।

গ্যাস, বিদ্যুতের সংকট ও জমির স্বল্পতা না থাকলে বস্ত্র খাতে আরও বিনিয়োগ আসত। কারণ, তৈরি পোশাকের বাজার বৃদ্ধির কারণে বস্ত্র খাতের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। তিনি বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় গত ৫ বছরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল।

শান্তিপূর্ণভাবে সদ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফলে আগামীতে অনুকূল পরিবেশ থাকবে। ফলে আরও বড় অঙ্কের নতুন বিনিয়োগ হবে বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চলমান পরিকল্পনায় বিনিয়োগে জমির সংকট থাকবে না।

তৈরি পোশাক নিট খাতের (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) প্রায় শতভাগ কাপড়ের জোগান দিচ্ছে দেশের বস্ত্র কলগুলো। অপর খাত ওভেনের (শার্ট,প্যান্ট) প্রায় ৬৫ শতাংশ জোগান দিচ্ছে বস্ত্র কলগুলো। বাকি ৩৫ শতাংশ কাপড় আমদানি করতে হয়। এই ৩৫ শতাংশ ক্রেতাদের ফরমায়েশ এবং অতি উচ্চমূল্যের পোশাকের উপযোগী কাপড়।

এসব কারণে বস্ত্র খাতে বিনিয়োগের আরও সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের প্রধান রফতানিকারক দেশ চীন এ শিল্প থেকে ক্রমান্বয়ে সরে আসার ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আরও কয়েকগুণ শক্তিশালী হয়েছে।

এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালে ৫০ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে উৎপাদনযজ্ঞ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে পোশাক রফতানি থেকে বছরে আয় তিন হাজার কোটি ডলারের ওপরে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে তিন হাজার ৬১ কোটি ডলারের পোশাক। চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে এক হাজার ৭০৮ কোটি ডলার। এ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৬৯ কোটি ডলার।

বাদশা মিয়া জানান, তার পাইওনিয়ার ডেনিম ২০১৭ সাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। গবেষণা, ডায়িং, উইভিং, ফিনিশিং, মান নিয়ন্ত্রণ সবই এখান থেকে হচ্ছে। ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *