বাড়ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক ও ভয়াবহতা

মৌসুম শুরুর আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক ও ভয়াবহতা। বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল, পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা। রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল।

কয়েকটি এলাকার বাসাবাড়ির একশটি পাত্রের মধ্যে দশটিতেই মিলেছে এডিসের লার্ভা। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নেওয়ার শঙ্কা কীটতত্ববিদদের। তাদের মতে, সংকট মোকাবিলায় এখন থেকেই এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসের জোরালো প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে নগরবাসীকেও।

কদিন আগেও ছিল ময়লার ভাগাড়। ছিল ভাসমান-উদ্বাস্তু মানুষ ও মাদকাসক্তদের আখড়া। অথচ এখন অনেকটাই পরিকল্পিত ও সুসজ্জিত অবস্থায় ফিরেছে গুলিস্তানের শহীদ মতিউর পার্ক। বেড়েছে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও।

এবার নজর দেওয়া যাক পুরনো জরাজীর্ণ অবস্থা পাল্টে আধুনিকরূপে ফেরা পার্কটির চারপাশে। কোথাও সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকছে পানি। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা সেই পানি পরিণত হয়েছে মশার উর্বর প্রজণন ক্ষেত্রে। এ ছাড়া পার্কের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরনো কৌটা বা পাত্রের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এক একটি পাত্রই যেন মশার এক একটি চারণভূমি। চোখের সামনে মশার এমন উর্বর প্রজণনক্ষেত্র অথচ উদাস কর্তৃপক্ষ।

দর্শনার্থীরা বলেন, পুকুরের চারপাশে মশার আখড়া, পার্কটির চারপাশে অপরিচ্ছন্ন হওয়ায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় চারপাশে। যারা ঘুরতে আসে তারা আতঙ্ক নিয়েই বেড়াতে আসেন। মূলত মশার কারণে।

পার্কটির পরিচ্ছন্ন কাজের দায়িত্বে থাকা একজন জানান, পানি জমেছে আমরা এটি দ্রুত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করবো।সম্প্রতি রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত এক জরিপ বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল। জরিপে, মশার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি পাওয়া গেছে ২৩টি ওয়ার্ডে। অর্থাৎ এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ১০টি পাত্রে মিলেছে এডিসের লার্ভা। ঢাকার দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে পরিচালিত হয় জরিপটি।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. ইকরামুল হক সময় সংবাদকে বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাত্র ৩টি সাইটে আমরা ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পেয়েছি। আর হাউজ ইনডেক্স আমরা হিসাব করে দেখেছি, এটি চার দশমিক ৭৫ যা ৫ এর কাছাকাছি। সুতরাং আমরা ধারণা করছি, এ বছর ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপের ফল বিবেচনায় নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে এখনই মশক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের পারমর্শ কীটতত্ববিদদের।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ববিদ ড. কবীরুল বাশার বলেন, যেসব পাত্রে এডিস মশা জন্মায় সেই পাত্র অপসারণ করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ সময় সিটি মেয়রদের উচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিটি ব্লকে ব্লকে ভাগ করে স্থানীয় সমাজকর্মী এবং যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে এডিসমশা নিয়ন্ত্রণে সংযুক্ত করা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কীটনাশক নিয়ে দুই সিটি করপোরেশন প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, লোকবল, যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ কী পরিমাণ মজুত আছে সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। তাদের অবস্থাটা পর্যালোচনা করেছি। পর্যালোচনায় দেখা গেছে তারা প্রস্তুত আছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। অন্যদিকে প্রাণ হারান ১০৫ হন। যাদের অধিকাংশই রাজধানীবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *