প্রচ্ছদ

নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশের রিজার্ভ

করোনা মহামারীর মধ্যেও একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছে। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের এসডিআর বরাদ্দ (ঋণ-সহায়তা) যোগ হওয়ায় দিন শেষে রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বাংলা‌দে‌শি মুদ্রায় এর প‌রিমাণ প্রায় চার লাখ ৯ হাজার ৮৬ কো‌টি টাকা, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। 
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। 
প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ বাংলাদেশের এই বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বল‌ছে, চল‌তি বছ‌রের ৩ মে দে‌শের রিজার্ভ প্রথমবা‌রের মতো ৪৫ বি‌লিয়ন ডলার ছাড়ায়। ওইদিন রিজার্ভ বে‌ড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৪ ফেব্রুয়া‌রি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার ছাড়ায়। এরও আগে গত বছরের ৩০ ডি‌সেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডি‌সেম্বর ৪২ বিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ডিসেম্বরে ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে আরও ৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়ল।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব শেষ জুলাই মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে এসেছে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসেনি। 
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসেবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আয়ের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। 
এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানি করে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম বার্ষিক রিপোর্টে (১৯৭১-১৯৭৩) বলা হয়, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরপর বাংলাদেশের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ছিল না। কিন্তু ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করে নিয়েছে। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার পরের বছরের ২৯ জুনে স্বাধীন দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *