খেলাধুলা

আশা জাগিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারল না পাকিস্তান

অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড় টপকাতে হলে নিজেদের গড়া বিশ্বরেকর্ডই ভাঙতে হত পাকিস্তানের। কিছুদিন আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪৪ রান তাড়া করে জয়ের সুখস্মৃতি আশাও জাগিয়েছিল বেশ। বড় লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনিংয়ে ইমাম আর আব্দুল্লাহ শফিকের দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বেশ ভালোভাবে এগোচ্ছিল তারা। কিন্তু মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত অজিদের বিপক্ষে জয় নিয়ে ফেরা হলো না বাবর আজমদের।

বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামটি ব্যাটিং সহায়ক এবং বাউন্ডারিও কিছুটা ছোট বলে রানের ফোয়ারা ছোটার ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সে সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের জোড়া সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া ৩৬৭ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায়। জবাবে রান তাড়া করতে গিয়ে ২৭ বল আগেই ৩০৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। এতে ৬২ রানের পরাজয় বরণ করল ম্যান ইন গ্রিনরা।

অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ইমাম উল হক ও আব্দুল্লাহ শফিক। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে তারা দুজনে ২১ ওভারে ১৩৪ রান তুলে ফেলেন তারা। তবে মার্কাশ স্টইনিসের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শফিক। ফিফটি তুলে ৬১ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ করেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পরেই বিদায় নেন ইমামও। সেই স্টয়নিসের বলে স্টার্কের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বিদায়ের আগে ৭১ বলে ৭০ রান করেন তিনি। তার ইনিংসটিতে ছিল ১০ চারের মার। দুই ওপেনারকে হারানোর পর খেই হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। সেই অবস্থায় দলীয় ১৭৫ রানের মাথায় অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণির ফাঁদে পড়েন রানমেশিন বাবর আজম। কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৮ রানেই থামে তার ইনিংস।

এতে মুহূর্তের মধ্যেই বিপাকে পড়ে যায় দলটি। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন উইকেটকিপার ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন সৌদ শাকিল। চতুর্থ উইকেটে তারা দুজনে মিলে পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটিতে আবার জয়ের পথে এগিয়ে আসে তারা। তবে হঠাৎ করেই আবার পথভ্রষ্ট হন তিনি। ব্যক্তিগত ৩০ করে প্যাট কামিন্সের বলির পাঁঠা হন শাকিল।

পরে ইফতেখার আহমেদকে নিয়ে এগিয়ে যান রিজওয়ান। তাদের জুটিটা গড়েও উঠেছিল। রানও আসছিল দ্রুতগতিতে। ফলে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পাকিস্তান। কিন্তু ইফতেখার (২৬) ফিরলে বড় ধাক্কা খায় তারা। সেই রেশ না কাটতেই রিজওয়ান (৪৬) বিদায় নিলে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।

শেষদিকে আর কেউই ত্রাতা হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। এদিন পাক শিবিরে ত্রাস ছড়ান জাম্পা। মূলত তার ঘূর্ণিতেই পথ হারান বাবররা। তার শিকার ৪ উইকেট। তাকে যোগ্য সমর্থন ২টি করে উইকেট তুলে নেন কামিন্স ও স্টয়নিস।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিশ্বকাপের ওপেনিং জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৯ রান তুলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। শাহিন শাহ আফ্রিদি-হাসান আলী কিংবা হারিস রউফদের তুলোধুনো করে ব্যাট হাতে দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। অবশ্য উসামা মীর ক্যাচ না ছাড়লে শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারতেন আফ্রিদি। উসামা যখন ক্যাচটা ছেড়েছেন তখন দলের রান মাত্র ২২, আর ১০ রানে ব্যাট করছিলেন ওয়ার্নার।

৩৪তম ওভারের পঞ্চম বলে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ওই উসামা মীরের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন মার্শ। ১০৮ বলে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় মার্শ খেলেন ১২৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। মার্শ আউট হয়ে গেলেও অপরপ্রান্তে ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে পাক বোলারদের কচুকাটা করছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দলীয় ৩২৫ রানে ওয়ার্নার হারিস রউফের বলে শাদাব খানের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে থামে ১২৪ বলে ৯ ছয় ও ১৪ চারের সাহায্যে করা ১৬৩ রানের ইনিংস।

একটা সময় মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপের দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড হয়ত ভাঙতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ওয়ার্নার ও মার্শের বিদায়ের পর তাসের মতো ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডার। দলের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। মার্কাশ স্টইনিশের ২১ ও জশ ইংলিশের ১৩ রান ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। এতে শেষ পর্যন্ত ৩৬৬ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

পাকিস্তানের হয়ে বোলিংয়ে একাই ৫টি উইকেট শিকার করেন শাহীন আফ্রিদি। এছাড়া হারিস রউফ ৩টি ও উসামা মীর ১টি উইকেট লাভ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *