শাহরীন ইসলাম মাহিন

কোথাও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সবার প্রথম কাজটি হলো আগুন নেভানো। আর এর জন্য দরকার প্রচুর পানি। কিন্তু বর্তমানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্তভাবে পাওয়া যাচ্ছে না পানির উৎস। বিশেষ করে যখন রাজধানীতে কোথাও আগুন লাগে তখন পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়, কোথাও পাওয়া যায় না পুকুর কিংবা খাল। কিন্তু কে বলবে এই রাজধানী ঢাকায় এক কালে ছিলো দুই হাজারের বেশি পুকুর।

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল দুই হাজার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে-গ্রামে এখন জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো জলাভূমিগুলো ভরাট করছেন। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও শহর পর্যায়ে একের পর এক জলাভূমিগুলো ভরাট করা হচ্ছে এবং কিছু জলাশয় ভরাট হচ্ছে অসাধু ব্যক্তির কারণে। তাই অগ্নিকাণ্ড ঘটলেই তা নেভাতে মিলছে না পানির উৎস বা জলাধার। এতে করে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানীসহ হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে অনেক সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

পানির উৎস  রক্ষায় আইন থাকলেও এই আইন না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে আবাসন। সরকার পানির উৎস রক্ষায় ২০০০ সালে আলাদা আইন করলেও এর কোনো সুফল নেই।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরে বড় বড় ভবন গড়ে উঠছে। কিন্তু এগুলো নির্মাণের পেছনে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা নেই। ফলে পুকুর-খাল-বিল-জলাধার একের পর এক বিলীন হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, অপরদিকে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নেভাতে মিলছে না পানি। জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে আবাসন।

শহরে পুকুর, খাল থাকাটা খুবই জরুরি। এগুলো বর্ষা মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা থেকে নগরকে রক্ষা করে এবং পাশাপাশি আগুন লাগলে নেভাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এভাবে পুকুর, জলাশয় ভরাট হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। এছাড়া দেখা দেবে মিঠা পানির সংকট। নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই এসব জলাধার আমাদের রক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএসএস) প্রধান নির্বাহী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিক রহমান বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে জলাভূমিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। গুলশানসহ ঢাকা শহরের ভেতরে বড় বড় জলাধার ছিল। এখন সবই দখল হয়ে গেছে। আগে অনেক পুকুর থাকলেও এখন তার অস্তিত্ব নেই। একমাত্র হাতিরঝিল ছাড়া আর কোনো জলাধার রক্ষায় তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিচুভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আমাদের এখনই পুকুর ও জলাশয় রক্ষায় এগিয়ে আসাতে হবে। নাহলে সমনের দিনগুলোতে অনেক কঠিনভাবে মোকাবেলা করতে হবে পরিস্থিতি। বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং ঢাকা শহরে কোথাও আগুন লাগলে।

লেখক : জেলা কোঅর্ডিনেটর, ইয়ুথনেট  ফর ক্লাইমেট জাস্টিস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *