ডেস্ক রিপোর্ট, সুখবর ডটকম: যখন পাকিস্তানের নারীরা তাদের মৌলিক অধিকার, যেমন শিক্ষা কিংবা কাজের অধিকার, সঠিকভাবে ভোগ করতে পারবে, তখনই রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের উন্নতি সম্ভব। কিন্তু পাকিস্তানের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় যে দেশের নারীদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। তাই দেশের উন্নতির জন্য নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সময় এসে গিয়েছে।
নারীদের শিক্ষা গ্রহণ কিংবা কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিরাপদ পরিবেশ তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কাজ কিংবা শিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক নারীদেরকে এদেশে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ কিংবা যৌন শোষণের বলি হতে দেখা গেছে বহুবার।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতার দরুণ সারাদেশে, বিশেষ করে রক্ষণশীল পরিবার কিংবা গ্রামীণ পরিবেশে নারীদেরকে চার দেয়ালের ভেতর বন্দি করে রাখা হয়।
নিপীড়ন কিংবা অত্যাচার চালানো অথবা দুই দলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা কিংবা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মহিলাদেরকে এখানে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশিরভাগ গ্রামীণ সমাজের নারীদেরকেই মূলত এ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। কারণ গ্রামীণ নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ের।
যদিও এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন রয়েছে তবে এসব আইন যথাযোগ্যভাবে প্রয়োগ হতে দেখা যায় না বললেই চলে। ফলে দেশের স্কুলগামী মেয়ে থেকে শুরু করে বিবাহিত মহিলা পর্যন্ত, অর্থাৎ যে কোনো বয়সের মেয়েদেরকেই অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হতে হয়।
পরিবারের সম্মান রক্ষার নাম করে অনেক মেয়েদেরকে খুন করা হয় কিংবা অনেককে পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে একটি জরিপ অনুযায়ী দেখা যায়, সারাবিশ্বে মহিলাদের জন্য অনিরাপদ দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অবস্থান ষষ্ঠ।
অনেক নাগরিকই এ অবস্থানের জন্য পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেন। মূলত সরকার আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই অপরাধীরা শাস্তির ভয় আর পায় না। ফলে দেশে এমন অন্যায়-অত্যাচার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নূর মোকাদ্দাম নামের ২৭ বছর বয়সী নারীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। এক মহিলাকে তার সন্তানের সামনেই ধর্ষণ করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়। অপর এক নারীকে সূর্যাস্তের পর বাড়ির বাইরে থাকার অপরাধে এফ ৯ পার্কে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বাসের ভেতর এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়- পাকিস্তানে মেয়েদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না।
অনেক ঘটনা জনসমক্ষে আসলেও অনেক ঘটনাই এখনো আড়ালে রয়ে গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ৩৯৮৭ জনেরও বেশি নারীকে খুন করা হয়। এসময় ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে ১০ হাজার ৫১৭ টি।
পাকিস্তানে নারীদের উপর এই ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের কারণ হিসেবে শিক্ষার অভাব, সচেতনতার অভাব, দারিদ্র্যের মতো বিভিন্ন কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যদিও দেশের অনেক মহিলাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রেখে যাচ্ছেন, তবে এ সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। দেশের নারী জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘরের বাইরে পা রাখতে পর্যন্ত ভয় পায়।