ঘরোয়া উপায়ে ডাবল চিন কমান

বয়স বেশি হয়নি অথচ অনেকেরই থুতনির নীচে মানে গলায় চর্বির একটা স্তর জমা হয়। দেখে মনে হয়ে চিবুকের নীচে আরেকটি চিবুক। একেই বলা হয় “ডাবল চিন”। কথাটি আরেকটু বুঝিয়ে বলি, আমাদের চিবুকের অধীনে থাকা চামড়ার ইলাস্টিন যখন কোলাজেন তন্তুর ভাঙ্গনের কারণে লুজ হয়ে যায় এবং তার স্থিতিস্থাপকতা হারায় তখন একটি ডাবল চিবুকের উদ্ভাবন হয়। সাধারণত, ডাবল চিবুক ন্যাচারাল এজিং প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এমনকি অনেক বছর ধরে সূর্য এক্সপোজার বা জেনেটিক্স জনিত কারণে এমনটি ঘটতে পারে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সাধারণত মুখের ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকেরই ব্যায়ামের প্রতি ভীষণ অনীহা আছে, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি অনীহা প্রকাশ করে তেমন কোন লাভ হবে না। বরং ব্যায়ামের পাশাপাশি আরও কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে যদি এই ডাবল চিন নামক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে এর চেয়ে ধূমকেতু কি আর কিছু আছে? এই উপায় গুলো ডাবল চিন প্রতিরোধের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। আজ আমরা জানবো ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে কীভাবে আমরা আমাদের মুখের ত্বককে সুদৃঢ় এবং টানটান করে তুলতে পারি।

ঘরোয়া উপায়ে ডাবল চিন কমান
ঘরোয়া উপায়ে ডাবল চিন কমান

ঘরোয়া উপায়ে ডাবল চিন কমান

ঘরোয়া উপায়ে ডাবল চিন কমান-

হুইট জারম অয়েলঃ

ডাবল থুতনি থেকে মুক্তি পেতে হুইট জারম অয়েল দারুন উপকারী। নিয়মিত এ তেল ব্যবহারে চামড়ায় টানটান ভাব আসে। ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা তেল ঘাড় ও গলায় মালিশ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে মালিশের সময় তাড়াহুড়ো না করাই ভালো। প্রায় ২০ মিনিট ধরে গলার নীচের দিক থেকে উপরের দিক পর্যন্ত মালিশ করতে হবে। সারা রাত তেল গলায় লাগিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।

ডিমের সাদা অংশঃ

ডাবল চিবুক থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি ডি্মের সাদা অংশ মুখের মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই মাস্ক তৈরি করার জন্য দুটি ডিমের সাদা অংশের সাথে এক টেবিল চামচ দুধ, এক চা চামচ বাদামের তেল , এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং মধু নিন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণ আপনার চিবুক এবং ঘাড়ের চারপাশে লাগিয়ে নিন আধা ঘন্টার জন্য। এরপর উষ্ণ জল দিয়ে মাস্ক তুলে ফেলুন। ডিমের সাদা অংশ ত্বকের সুস্বাস্থ্য প্রদান করে এছাড়াও চিবুকের এলাকায় পানি রিটেইন করা থেকে বিরত রাখে। দ্রুত ফলাফল পেতে দৈনন্দিন একবার এই মাস্ক প্রয়োগ করুন।

ভিটামিন ইঃ

ভিটামিন ই ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ভীষণ ভাবে প্রয়োজনীয়। আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ই এর অনুপ্রবেশ saggy ত্বকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ভিটামিন ই এর কারণে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় অতঃপর ডাবল চিবুক হ্রাস পায়। ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস হল বাদামি চাল, শাক সবজি, দুগ্ধজাত খাবার, ডাল, মিষ্টি ভুট্টা, আপেল, সয়াবিন, কলিজা। এই আইটেম গুলো দৈনন্দিন খাদ্যের মধ্যে রাখুন আর ডাবল চিবুক থেকে সহজেই পরিত্রাণ পেয়ে যান।

কোকোয়া বাটারঃ

কোকো মাখন দিয়ে চিবুক এবং ঘাড় মালিশ করলে চিবুকে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি পায় ফলশ্রুতিতে ডাবল চিবুক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোকো মাখন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা অর্থাৎ ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুই টেবিল চামচ কোকো মাখন নিন এবং এটি সামান্য গরম করুন। ডাবল চিবুক এই গরম কোকো মাখন হালকা হাতে ম্যাসেজ করুন। দ্রুত ফলাফল পেতে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিটের জন্য ম্যাসেজ করুন। এই প্রক্রিয়ার নিয়মিত অবলম্বন আপনার ডাবল চিবুক ধীরে ধীরে কমিয়ে আনবে। ঘুমানোর আগে বা গোসলের আগে এটি করা ভালো। কোকোয়া বাটার ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ে।

তরমুজঃ

তরমুজের রস ডাবল চিবুক কমাতে সাহায্য করে, কারণ তরমুজ ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে। তাজা তরমুজের রস নিন এবং একটি তুলোতে নিয়ে চিবুক এবং ঘাড়ের অংশে ব্যবহার করুন। প্রায় ১৫-২০ মিনিটের জন্য ত্বকে রস রেখে দিন এবং পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। আপনি যদি ভালো ফলাফল পেতে চান তাহলে তরমুজের রসের সঙ্গে আপেল জুস মিশ্রিত করে চিবুকে প্রয়োগ করুন এবং কয়েক মিনিটের জন্য এটি ম্যাসেজ করুন। তরমুজ ভোজনকারীর ওজন দ্রুত কমে যায়। যা ডাবল চিবুক অপসারণের আরেকটি পদ্ধতি।

গ্লিসারিন মাস্কঃ

ডাবল চিন থেকে মুক্তির আরেকটি উপায় হল গ্লিসারিন মাস্ক। এটি অন্যতম ঘরোয়া উপায়ও বটে। এক চামচ গ্লিসারিনের সাথে আধা চামচ বাথ সল্ট এবং কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। কটন বলে নিয়ে এই মাস্ক চিন এবং গলায় লাগিয়ে নিন। এরপর সব পুষ্টি যেন সঠিক ভাবে শোষিত হয় সেজন্য আধা ঘণ্টার জন্য চিবুকে লাগিয়ে রাখুন। গ্লিসারিন ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং বাথ সল্ট ওয়াটার রিটেনসন হ্রাস করে। আধা ঘণ্টা পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ইতিবাচক ফলাফল পেতে দৈনিক ৩-৫বার এই মাস্ক প্রয়োগ করুন।

পানি পানঃ

যদি আপনি ডাবল চিনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তবে বেশি বেশি পানি পান করুন। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরে পানির অভাব হলে মুখ ভারী হয়ে যায়। তাই ডাবল চিবুক কমাতে দৈনিক অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। আপনি বেশি পরিমাণে ফল ও সবজি খেয়েও আপনার শরীরের পানির ভাগ বাড়াতে পারেন। আপনি যদি দ্রুত ফলাফল পেতে চান তবে কফি, চা, এবং মদ জাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন।

সবুজ চাঃ

সবুজ চায়ের বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করার ক্ষমতা আছে। ফলে এই চা সেবনে শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি বার্ন হয়। দিনে কয়েক কাপ সবুজ চা পান আপনার বিপাকীয় হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং ক্যালরি বার্ন হবে আর আমরা জানি শরীরে অতিরিক্ত মেদের জন্য ডাবল চিন দেখা যায়।

ডাবল চিন দূরীকরণে ঘরোয়া উপায়ের উপকারিতাঃ

-এদের অধিকাংশই প্রাকৃতিক পণ্য বা প্রমাণিত চর্চা উপর ভিত্তির করেই ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় তাই এগুলো নিরাপদ।

– ডাবল চিন প্রতিকারে ব্যবহৃত অধিকাংশই পণ্যই সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়।

– ডাবল চিবুক সমস্যা পরিত্রাণ পেতে কস্মেটোলজির সাহায্য নেয়া লাগেনা।

– উপকার না হলেও যেন অপকার না হয় সেই ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন ।

তাহলে আজই ডাবল চিন প্রতিরোধের যুদ্ধে নেমে যান। উপরোক্ত টিপস মেনে চললে জয়ী আপনি হবেনই। এগুলোর সঙ্গে নিয়মিত গলার ব্যায়াম করতে ভুলবেন না যেন।