খুশকি মুক্ত চুল পেতে করনিয়
খুশকি সমস্যা কমবেশি সবারই হয়ে। সাধারনত মাথার লোমকূপে ময়লা জমে এবং ছত্রাকের কারনে খুশকি হয়ে থকে । এছাড়া চুল রুক্ষ হয়ে গেলেও আর্দ্রতা কমে খুশকি হয়ে থাকে । খুশকি আমাদের সবার কাছেই অনেক বড় আতঙ্কের কারন । শুধু তৈলাক্ত স্কাল্প নয়, যাদের শুষ্ক স্কাল্প তারাও এর শিকার হয়ে থাকেন। শীতকালে খুশকির প্রকোপটা বেড়ে যায়। যার অন্যতম কারণ হলো গরম পানি দিয়ে গোসল করা । এতে মাথার স্কাল্প শুষ্ক হয়ে যায়।তবে একটু সচেতন হলেই খুশকির এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।
খুশকি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া। চিরুনি ও চুল মোছার তোয়ালে আলাদা করে রাখা উওম । চুল খুশকি মুক্ত রাখতে প্রতিদিন চিরুনি, তোয়ালে, বালিশের কভার ও চাদর পরিস্কার রাখা প্রয়োজন। এছাড়া ভেজা অবস্থায় চুল না আঁচড়ানো ভালো।
এছাড়া খাদ্যাভাসও চুলের খুশকি প্রতিরোধে অনেকটা ভূমিকা রাখে। এ জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং টাটকা ফল, সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া।খুশকি দূর করতে অনেকেই ছুটে চলেন নামিদামি পার্লারে। কিন্তু যাদের নিয়মিত পার্লারে যাওয়া সম্ভব হয় না। তারা ঘরে বসে নিজেই নিতে পারেন নিজের চুলের যত্ন।আসুন জেনে নেওয়া যাক এই টিপস গুলো –
- জবা ফুল, আমলকি ও জলপাই একসঙ্গে বেটে পেস্ট করে চুলে লাগিয়ে, আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে খুশকি কমে যায়।
- দূর্বা ঘাস ও নিমপাতা বাটা, ভিনেগার ও শসার রস মিশিয়ে পেস্ট করে মাথার তালুতে লাগিয়ে আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- তুলসি পাতা বাটার সঙ্গে কর্পুর ও লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় আধঘণ্টা রেখে দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
- কাঁচা আমলকি ছেঁচে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলায় গরম করে অথবা রোদে দুই তিন দিন শুকিয়ে বোতলে ভরে রেখে দিতে হবে। সপ্তাহে দুদিন সেই তেল মাথায় লাগালে খুশকি চলে যাবে।
- চুলে শ্যাম্পু করার আগে মাথায় গরম তোয়ালের ভাপ দিতে হবে।
- মেথী বাটা, আমলকির রস, ডিমের সাদা অংশ ও টকদই, পানিতে পেস্ট করে মাথায় দিয়ে, আধঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- আমলকি ও শিকাকাই গুঁড়ো, নারকেল তেলের সঙ্গে পেস্ট করে চুলে দিতে হবে। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
- পেয়াঁজের রস মাথার তালুতে দিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- লেবু খুশকি দূর করে। চুল শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে লেবু মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- হেনা পাউডার, রিঠা পাউডার দিয়ে তৈরি ভেষজ প্যাক ব্যবহার করতে পারেন এতে খুশকি দূর হবে।
- লেবু এমন এক উপাদান যা ত্বক, চুল সব কিছুর জন্য খুবই উপকারী। তবে সরাসরি লেবুর রস কখনই ব্যবহার করবেন না। কেননা লেবুর রসে থাকা এসিড উপকারের বদলে অপকার করতে পারে। ৩/৪টি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে ৪-৫ কাপ পানিতে ২০ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। ঠাণ্ডা হলে এই সলিউশন দিয়ে শ্যাম্পু ত্বকে ম্যাসাজ করার পর চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি প্যাকের কথা বলছি। ১ চা চামচ লেবুর রসের সাথে ৫ চ চামচ নারকেলের তেল ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তারপর মাথার তালুতে ভালো ভাবে লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস খুশকি দূরীকরণের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। এটি স্কাল্প থেকে ফ্লেক পরিষ্কার করে দেয়।
- ভিনেগার খুশকির হাত থেকে মুক্তির অন্যতম প্রধান উপাদান। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এতে থাকা পটাসিয়াম এবং এনজাইম ইচি স্কাল্প আর খুশকি সারিয়ে তোলে। একটি কটন প্যাডে ভিনেগার নিন। তারপর চুলে বিলি কেটে কেটে পুরো মাথায় ত্বকের মধ্যে লাগান। সপ্তাহে ২ দিন গোসলের ১ ঘণ্টা আগে লাগিয়ে রাখুন।
- বেকিং সোডা খুব ভালো অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে আর এর ব্যবহারও খুব সিম্পল। এক মুঠো শ্যাম্পুর সাথে এক টেবিল চামচ সোডিয়াম বাই কার্বনেট মিশিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করবেন।
- এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ রসুন পেস্ট মিশিয়ে একটি প্যাক বানান। এই প্যাক ফ্লেক থেকে চুলের খুশকি দূরে রাখে। রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক যা স্কাল্পের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশ ধ্বংস করে। এই অ্যান্টিডেনড্রাফ ট্রিটমেন্ট চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার ধুয়ে ফেলবেন।
- খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো ৪ টেবিল চামচ বেসনের সাথে ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। বেসন মাথার তালুর তেল শোষণ করে নেয়ার ক্ষমতা রাখে আর এভাবেই খুশকির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। গোসলের আগে এই প্যাক লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলবেন। চাইলে শুধু মাত্র পানি দিয়েও ধুয়ে ফেলতে পারেন।
- আপেলে থাকা এনজাইম ডেড স্কিন সেল দূর করে। দুই টেবিল চামচ ফ্রেশ আপেলের রস ১ চা চামচ পানির সাথে মিশিয়ে কটন প্যাডের সাহায্যে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
জাঙ্ক ফুড খুব কম খাবেন কেননা এতে আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে খুশকির আক্রমণের আশংকা থাকে। এসব ভাজা পোড়া খাবারের বদলে জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি যুক্ত খাবার খান আর আপনার প্রাত্যহিক কিছু অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে , যেমন- যতবার বার শ্যাম্পু করবেন তার পরপর সদ্য পরিষ্কার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন । কেননা প্যাক লাগানোর পর আপনার চুল অনেকটা খুশকি মুক্ত হয়ে যায় কিন্তু আপনি যদি সেই আগের খুশকিযুক্ত বালিশের কাভার, চিরুনি আর তোয়ালে আবার ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু কোন লাভই হবে না।
এরপরও যদি চুলে খুশকি হয়, তাহলে ভালো কোনো পার্লারে গিয়ে হারবাল ট্রিটমেন্ট কিংবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এভাবে চুলের যত্ন নিলে শুধু চুলের খুশকি দূর হবে না, সেইসাথে চুল হবে সুস্থ ও সুন্দর।