সাধারনভাবে পুরুষদেরকে ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটাতে হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ধুলোবালির প্রলেপে ত্বকের রঙ তামাটে, রুক্ষ ও ম্লান হয়ে যায়। আর এই সমস্যা সমাধানে পুরুষদের ত্বকের এ রুক্ষতা দূর করতে নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন। এছাড়া পুরুষের ত্বক মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি পুরু। আর এই কারনে মেয়েদের ত্বকচর্চা থেকে পুরুষদের রূপচর্চার ধরনটাই আলাদা। ছেলেদের সবচেয়ে বেশি সমস্যার জায়গা হলো ভ্রুর রেখার ভাঁজ, চোখের কোনের ত্বকে কুঁচকে যাওয়া দাগ, ঝুলে পড়া গাল আর এবড়ো-থেবড়ো ছিদ্রযুক্ত অমসৃণ ত্বক। অবশ্য ত্বকের যত্নে পুরুষরা এখন অনেক বেসজি যত্নশীল।
সাধারনত পার্লার বা সেলুনগুলোতে শুধু চুল কাটতে নয়, এর পাশাপাশি চুল সাজানো, শ্যাম্পু, মেনিকিউর, ব্লিচ, ফেসিয়াল, বডি ম্যাসাজ, বডি প্যাকও করছেন। এই কারণে শুধু ছেলেদের রূপচর্চার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আলাদা পার্লার। এসব জায়গায় পুরুষের ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, চুল বেঁকে যাওয়া, খুসকি দূর করা ইত্যাদি জটিলতায় পরামর্শ ও সমাধান দেয়া হয়। হাত পায়ের যত্নের জন্য রয়েছে মেনিকিউর, পেডিকিউর, ব্লিচ, ম্যাসাজ ইত্যাদি। রোদ, বাইরের ময়লা, বিভিন্ন দূষণ ইত্যাদি ত্বককে করে তোলে শুষ্ক ও খরখরে। নিয়মিত তাই ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। শেভ করাতো প্রায় সব পুরুষের ই নিয়মিত কাজ। এছাড়াও তাদের ত্বক অনুযায়ী প্রয়োজন প্রতিদিনের যত্ন নেওয়া ।
পুরুষরা বাইরে বের হওয়ার আগে হাত মুখ ধুয়ে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নিন। সাথের ব্যাগটিতে রাখতে হবে কোন ফেশাল বা ফেসওয়াশ। ব্যস্ত শহরের যানজট আর ধুলোবালির মধ্য দিয়ে অফিসে পৌঁছে প্রথমেই ব্যাগে রাখা ফেশাল বা ফেসওয়াশটি দিয়ে একটু হাত মুখ ধুয়ে এলে কাজের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি হয় । ধুলোবালি ও ঘাম থেকেই সৃষ্টি হয় নাকের দুই পাশে, ঠোঁটের কোণে, থুতনির কাছে ব্ল্যাক-হেডসের মতো ত্বকের নানান রকমের সমস্যা। যারা সারা দিনে হাত-মুখ পরিষ্কার করার সময় পান কম তাদের মাসে অন্তত একদিন কোন ছেলেদের বিউটি সেলুনে গিয়ে ফেশাল করানো উচিত।
যাদের শুষ্ক ত্বক তারা সানবার্ন ফেশাল করাতে পারেন। এটি রোদে পোড়া ত্বকের জন্যেও খুবুই উপকারী। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা অ্যালোভেরা ও গোল্ড ফেশাল ব্যাবহার করাতে পারেন। যাদের ত্বকে ব্রনের সমস্যা রয়েছে তারা আয়ুর্বেদিক ফেশাল করালে কউপকার পাবেন। আর যারা ঘরে বসে ত্বকের যত্ন নিতে চান তারা রোদে পোড়া ভাব কমাতে চন্দনের প্যাক ব্যাবহার করতে পারেন। এখন বাজারে নানা ধরনের স্ক্রাব পাওয়া যায়। এসব স্ক্রাব দুই তিনদিন পর পর বাবহার করে মুখে লাগিয়ে কিছু সময় মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া মাঝে মাঝে রাতে ঘুমানোর আগে উপটান লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিবেন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে ব্ল্যাক-হেডস থাকলে গরম পানিতে কিছু সময় ভাপ নিয়ে আস্তে আস্তে দুই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চেপে ব্ল্যাক-হেডস বের করতে পারেন।
চুলের যত্ন :
যদিও সুন্দর লম্বা চুলে মেয়েদেরই অধিকার । তবে চুলহীন পুরুষও কারও কাম্য হতে পারে না। নারী পুরুষ সবার কাছেই চুল শরীরের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় অংশ। তাই প্রতিদিন চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। চুলের নিজস্ব কোনো রক্তনালী নেই। ত্বকের পুষ্টি থেকেই চুল পুষ্টি পেয়ে থাকে। আর আমরা নিয়মিত যে খাবার খাই তা থেকেই আমরা এ পুষ্টি পেয়ে থাকি। তাই সুন্দর চুলের অধিকারী হওয়ার জন্য পুরুষদেরও কিছুটা কষ্ট ও করতে হয়। চুলে প্রতিদিন তেল দেয়া, চুল শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং করা খুবই জরুরি কাজ। আর যদি সম্ভব হয় তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে মেহেদি ব্যবহার করুন উপকার পাওয়া যাবে।
খুশকি হলে কি করবেন :
খুশকিএকটি সাধারণ সমস্যা।কারো যদি অনেক দিন ধরে খুশকির সমস্যা থাকে তবে মুখে ব্রন হওয়া, চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। চুলের হালকা তেল ব্যাবহার অনেক ক্ষেত্রেই এ সমস্যার সমাধান করে। মেহেদি খুশকির সমস্যার সমাধানের সহায়ক করে। এরসঙ্গে ডিমের সাদা অংশ, দই, কফি, অল্প গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগান। আধাঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া রোধে করণীয়:
চুল পরে থকে নানা কারণেই। ২০-২২ বছর বয়সের পর থেকেই চুল কমতে শুরু করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হরমোন এন্ড্রোজেনই প্রধানত চুল পড়ার জন্য দায়ী থকে । এই হরমোন পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে। তাই তাদের চুল বেশি পড়তে দেখা যায়। আবার বংশানুক্রমে কোন পরিবারে এই হরমোনের প্রতি হেয়ার ফলিকলের সংবেদনশীলতা বেশি থাকলে সেই বংশের ছেলেদের টাক পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে এখন মাথা কামিয়েও রাখেন অনেকে। বেশি চুল পড়ে টেকো হয়ে ঘুরে বেড়ানোর চাইতে মাথা কামিয়ে নতুন স্টাইল ধরাটা কিন্তু মন্দ নয়।
সবশেষে বলতে চাই, সুদর্শন পুরুষ মানেই সুন্দর ত্বক ও চুল এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কোনো ব্যক্তিকে বোঝায়। তবে এজন্য নিয়ম মেনে নিয়মিত যত্ম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ঠিকমতো খাবার-দাবার গ্রহণ ও ভালো ঘুমের বিকল্প নেই।