মডেল: মুনমুন রায়; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল; মেকআপ: চয়ন রায়; লোকেশন: লাহা বাড়ি
সারা দিনের কাজ সেরে, সন্ধেবেলা আপনি কী করেন? পরিবারের সঙ্গে গল্পগুজব, একসঙ্গে খাওয়া বা একটু বেড়িয়ে আসা। তার পরে শান্তির ঘুম। দিনের শেষে এই ‘মি টাইম’ই শরীর আর মনের ক্লান্তি দূর করে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার তরতাজা লাগে। গোটা দিনের রোদ, ধুলো, দূষণের ঝক্কির পরে ত্বকেরও একটা ‘মি টাইম’ প্রয়োজন হয়। তাকে সেই বিশ্রাম ও পরিচর্যা দেয় নাইট ক্রিম। বাজারে নাইট ক্রিমের অঢেল অপশন। তার যে কোনও একটা নিয়ে এসে কোনওক্রমে মুখে ঘষে ঘুমিয়ে পড়লেই কিন্তু ফল লাভ না-ও হতে পারে। নাইট ক্রিম বাছাই ও প্রয়োগের কিছু বিধি আছে। সেই বিধি অনুসারে রূপচর্চার ধাপগুলি মেনে নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন।
কী ভাবে কাজ করে
ডে ক্রিমের অন্যতম কাজ হল রোদ-বৃষ্টি ও আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করা। আর নাইট ক্রিমের কাজ ক্ষয়ক্ষতি মেরামতি ও ত্বকের সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার। নাইট ক্রিম সারা রাত ধরে ত্বকের গভীরে ময়শ্চার পৌঁছে দেয়, কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে চামড়া টানটান রাখে। ত্বকের ভিতরের অংশে পুষ্টি পাঠিয়ে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। কয়েকটি বিশেষ উপাদান খুব সক্রিয় ভাবে কাজগুলি করে। যেমন কফি দানার নির্যাস, মধু, শিয়া বাটার, কিছু এসেনশিয়াল অয়েল, কয়েক ধরনের ভেষজ, জুঁই ও হোহোবার রস, ভিটামিন সি এবং ই ইত্যাদি। ভাল নাইট ক্রিমে এই উপাদানগুলি থাকেই। তবে অ্যান্টি-এজিং নাইট ক্রিমগুলিতে বাড়তি কয়েকটি উপাদান যেমন রেটিনল, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি-থ্রি এবং কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্টস থাকে। এগুলি কোলাজেন গঠনের প্রক্রিয়ায় অনুঘটকের কাজ করে ও বয়সজনিত কালো ছোপ মুছে দেয়।
বাছাই প্রক্রিয়া
বয়স ও ত্বকের ধরন বুঝে নাইট ক্রিম নির্বাচন করতে হবে। কুড়ির কোঠায় বয়স হলে ডিপ নিউট্রিয়েন্টস-যুক্ত নাইট ক্রিম বেছে নিন। সঙ্গে নাইট ক্রিমের পাশাপাশি আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করা শুরু করুন। কারণ, চোখের নীচের চামড়া খুব পাতলা হয়। সবার আগে বয়সের সূক্ষ্ম রেখা ওখানেই দেখা দেয়। ত্রিশ ছুঁইছুঁই বয়সে অ্যান্টি-এজিং প্রডাক্টগুলি ব্যবহার শুরু করে দিন। এতে বয়স বাড়লে সুফল বেশি পাবেন। চল্লিশ থেকে ত্বকের কোলাজেন দ্রুত হারে ভাঙতে থাকে। ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে এমন নাইট ক্রিম বেছে নেওয়া উচিত।
ত্বক শুষ্ক হলে বুনো গোলাপের নির্যাস যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন। এই ক্রিম ত্বকের শুষ্ক খোলস সরিয়ে, ভিতরের নতুন ত্বকের পরত বার করে আনে। ফলে মুখে হালকা গোলাপি আভাও দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বক হলে ডিপ ময়শ্চারাইজ় করে, এমন প্রডাক্ট বাছবেন না। ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে এমন ক্রিম কিনুন। খুব তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ক্রিমের সঙ্গে সেরাম মিশিয়ে লাগান। অতিরিক্ত সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে গ্লিসারিন যুক্ত, ইনটেন্স (ডিপ নয়) ময়শ্চারাইজ়ার দেওয়া ক্রিম বাছাই করুন।
শুধু বয়সই কারণ নয়। অনিয়মিত জীবনচর্যা, স্ট্রেস, অনিদ্রা ইত্যাদির কারণে সময়ের আগেই চেহারা রুক্ষ বিবর্ণ দেখাতে পারে। চোখের নীচের ফোলা ভাব, কুঞ্চন, বলিরেখা দেখা দিতে পারে। আয়নায় নিয়মিত নিজের মুখ পরীক্ষা করুন। এমন লক্ষণ দেখা দিলে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নাইট ক্রিমের ব্যবহারে রাতে ত্বকের যত্ন নেওয়ারই একটি অঙ্গবিশেষ।
বাছাইয়ের আগে
আপনার ত্বক শুষ্ক না মিশ্রিত, তৈলাক্ত নাকি সংবেদনশীল সে বিষয়টি জেনে ক্রিম বাছাই করুন। আবার কারও হয়তো ডার্ক সার্কল রয়েছে, সে ক্ষেত্রে স্কিন টোন সমান করে এমন ক্রিম বাছলে উপকার পাবেন। যাঁর ত্বকে অল্পেই র্যাশ বার হয় তিনি অ্যালকোহলযুক্ত প্রডাক্ট বর্জন করবেন। হাতের উলটো পিঠে অল্প ক্রিম লাগিয়ে মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ পরে ত্বক সেই ক্রিম শোষণ করে নিলে বুঝবেন তা আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত।
নাইট ক্রিম ব্যবহার বিধি
প্রথমে ফেসওয়াশ (শীতে ক্লেনজ়ার) দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হালকা মুছে নিন। স্কিন টোনার লাগান। যাঁরা ঘন ঘন মেকআপ করেন, তাঁরা ‘বুস্টার’ সেরাম লাগান। এ বার আন্ডার আই ক্রিমের পালা। ত্বকের কোথাও এজ স্পট (মেচেতা বা ছোপ) থাকলে সেখানেও আই ক্রিম লাগিয়ে ত্বকে মিশিয়ে দিতে পারেন। চোখের পাতায় ক্রিম লাগাবেন না। বিশেষত আই ক্রিম যেন কোনও ভাবেই চোখের ভিতরে চলে না যায়। এর পরে নাইট ক্রিম লাগান। আঙুলের ডগায় আলতো করে নিয়ে, গলার নীচ থেকে উপরের টানে ও গালের অংশে বৃত্তাকার টানে ক্রিম লাগাবেন।
বাড়িতেই বানান
নাইট ক্রিম সাধারণত দামিই হয়। তবে প্রতি রাতে সামান্য লাগে বলে তাড়াতাড়ি ফুরোয় না। চাইলে বাড়িতেও নাইট ক্রিম বানিয়ে ফেলতে পারেন। তার জন্য দু’টি আপেল কেটে, দানা ছাড়িয়ে শক্ত অংশ ফেলে দিন। আপেলের টুকরো ও অলিভ অয়েল ব্লেন্ডারে দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। একবার ওই মিশ্রণ ফুটিয়ে তাতে আধকাপ গোলাপ জল দিন। ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করুন।
শীতের জন্য বাদাম আর নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। পরিমাণ হবে আধবাটি মতো। বাকি অংশ গোলাপ জল ও গ্লিসারিন দিয়ে ভর্তি করুন। এই মিশ্রণ নাইট ক্রিম হিসাবে অনবদ্য।
এই ক্রিমের উপকার পেতে ভাল ঘুম ভীষণ জরুরি। শরীর ও মন পুরোপুরি বিশ্রামে গেলে তবেই নাইট ক্রিমের উপাদানগুলি কাজ শুরু করে। কাজেই নাইট ক্রিম লাগানোর দশ মিনিট পরেই সব চিন্তা সরিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন। ক্রিম শুরু করুক তার ক্রিয়াকর্ম।