স্বাস্থ্য

মহামারির মতো বিপদ আরও আসছে, তৈরি হোন

তবে কোভিড-১৯ যদি শিগগির নির্মূল হয়ে যায়ও, সে ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য স্থিতাবস্থার দিকে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত হবে না। প্রাক্‌-মহামারি বিশ্বে সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুধু যে একটি মারাত্মক রোগজীবাণুর জন্য প্রস্তুত ছিল না, তা নয়; বরং তারা এখনকার চলমান এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের বিস্ফোরণ মোকাবিলারও ন্যূনতম ধারণা আগেভাগে দিতে পারেনি। যদি আমরা এ মহামারির পরিসমাপ্তি ঘটানোকেই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে দেখতে থাকি, তবে নতুন স্বাভাবিক অবস্থাটি পুরোনোটির মতোই ভঙ্গুর হবে।

মহামারি এখন আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। এ মহামারির সময় আমরা দেখেছি সাম্যের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সংগত আগাম বৈশ্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার বদলে ভ্যাকসিন বিতরণে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে নেতাদের গড়িমসি করতে দেখা গেছে।

তবে পাহাড়সমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স ১৪৬টি দেশে ১৭৫ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে দেড় শ কোটি ডোজ ৯২টি নিম্ন আয়ের দেশে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে কোভ্যাক্স নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে গড়ে ২০ শতাংশ টিকা দেওয়ার হার অর্জনে সহায়তা করেছিল। এ হার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।

ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য আমরা যে নীতিই রাখি না কেন, আমাদের অবশ্যই তা দ্রুত নির্ধারণ করতে হবে। আমরা পছন্দ করি বা না করি, পরবর্তী দুর্যোগ সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখাটাকে অবশ্য আমাদের নতুন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করতে হবে।

কিন্তু পরের বার যখন আমরা এ ধরনের একটি বৈশ্বিক সংকটের মুখোমুখি হব, তখন যাতে অধিকতর দ্রুততায় সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে পারি, তা আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যেকোনো সম্ভাব্য সুরক্ষা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ তহবিল ও অর্থায়ন নিশ্চিত করে রাখতে হবে অথবা নিদেনপক্ষে প্রাক্‌-অনুমোদিত একটি কন্টিনজেন্ট তহবিল থাকতে হবে, যাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলো অবিলম্বে জীবন রক্ষাকারী প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোর সুবিধা পায়।

মহামারির আগে কোভ্যাক্সের জন্য যদি সম্পূর্ণ তহবিল নিশ্চিত করা যেত, তাহলে এর সুফল আরও অনেক বেশি পাওয়া যেত। কোভ্যাক্স কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছিল, কারণ ইতিমধ্যে তারা একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের ভিত্তি দাঁড়ি করিয়ে ফেলেছিল। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাকসিনগুলো কাজ করবে কি না বা কত ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে, তা না জেনেই কোটি কোটি ভ্যাকসিন ডোজ কর্মকর্তারা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সুরক্ষিত করেছিলেন।

আরও পড়ুন

ভবিষ্যতের আরও মহামারির জন্য আমাদের প্রস্তুতি কী?

অবশ্য কোভ্যাক্স মডেল ভবিষ্যতের সব ধরনের বিপর্যয়ের জন্য ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ সমাধান (একের ভেতরে সব সমস্যার সমাধান) নয়, তবে এটি আমাদের এমন দরকারি পাঠ দেয়, যা জনস্বাস্থ্যের বাইরের সংকটগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ স্ট্রাইপ, অ্যালফাবেট, শপিফাই, মেটা এবং ম্যাককিন্সির নেতৃত্বে চলা বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো কোভ্যাক্সের উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে ক্লাইমেট অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট শীর্ষক একটি জলবায়ুসংকট সমাধান প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এখানে আগাম বিনিয়োগ করার জন্য তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য আমরা যে নীতিই রাখি না কেন, আমাদের অবশ্যই তা দ্রুত নির্ধারণ করতে হবে। আমরা পছন্দ করি বা না করি, পরবর্তী দুর্যোগ সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখাটাকে অবশ্য আমাদের নতুন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

  • হোসে মানুয়েল বারোসো ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট (২০০৪-২০১৪) এবং পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী (২০০২-২০০৪)। বর্তমানে তিনি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি বোর্ডের চেয়ারম্যান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *