চামড়াকে টান টান করে ধরে রাখতে সাহায়তা করে কোলাজেন নামক যে প্রোটিন,বয়স বাড়তে থাকলে যা ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে ত্বক পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। চামড়ার যে স্থিতিস্থাপকতা সেটি আসে ইলাস্টিন থেকে এবং সেটি আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সহায়তা করে। বয়স বাড়ার প্রতিক্রিয়ায় এই দুটি উপাদান ক্ষয় হয় বা পরিমাণে হ্রাস পায়। এর ফলে ত্বকে দেখা দেয় শুষ্ক ভাব, গড়ে উঠে ভাঁজ- যাকে সাধারণভাবে বলিরেখা বলা হয়ে থাকে।
তবে কেবল বয়সের কারণেই যে বলিরেখা পরে, সেটাও নয়। অসুস্থতা, পরিবেশ দূষণ, ধূমপান, মদ্যপান, রোদে সুরক্ষা ব্যবহার না করা, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট, এলোমেলো জীবন যাপন ইত্যাদি অনেক কিছুই তরান্বিত করে ত্বকে বলিরেখার আগমনকে।
১. কারা বেশি বলিরেখা সমস্যায় পড়ে?
পুরুষের চেয়ে মহিলাদের মুখে এবং ঠোঁটের চারপাশে বেশি বলি রেখা পড়ে। ঠোঁটের চারপাশে এরকম বলি রেখা কে perioral wrinkle বলা হয়। নেদারল্যান্ড এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পুরুষের ঠোঁটের চারপাশে sweat gland বেশি এবং মুখে circulation বেশি হয়। তাই ঠোঁটের কাছে পুরুষের বলিরেখা মেয়েদের চেয়ে কম পড়ে।
২. বলিরেখার প্রধান কারণঃ
অনেকেই মনে করেন যে বলিরেখার প্রধান কারণ বয়স। অর্থাৎ যার বয়স বাড়তে থাকবে তার শুধু মাত্র বলিরেখা থাকবে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। বলিরেখার প্রধান কারণ হল সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি। বলিরেখা থেকে রক্ষা পেতে চাইলে প্রতিদিন এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন যেটাতে অন্ততSPF 30 আছে যা আপনার ত্বক কের UVA আর UVB থেকে রক্ষা করবে।
৩. কত বছর বয়স থেকে সতর্ক হবেন?
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ৩০ বছরের পর থেকে বলিরেখা যেন না পড়ে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু এটাও একটা ভুল কথা। ২০ বছর বয়স থেকেই বলিরেখার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের। সানস্ক্রিন এর ব্যবহার হল best anti-aging treatment, তাই ২০ বছর বয়স থেকেই retinoids আর topical antioxidant ব্যবহার করা শুরু করতে হবে।
৪. মুখের বিভিন্ন ভঙ্গীঃ
সব সময় আড় চোখে দেখা, ভ্রু আর কপাল কুঁচকে তাকানো, অতিরিক্ত হাসি সহ ঘন ঘন বিভিন্ন facial expression এর কারণে মুখে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। অনেকেই না বুঝে নিজে নিজেই বিভিন্ন মুখের ব্যায়াম করে মুখের ত্বক ঠিক রাখার জন্য। কিন্তু এ ধরণের ব্যায়াম কখনই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর instruction ছাড়া করা উচিত নয়। হয়ত নিজেকে young দেখাতে চেষ্টা করতে গিয়ে আপনি ভুলে আপনার মুখে বলি রেখা পড়ার রাস্তা সহজ করে দিচ্ছেন।
৫. কি প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন?
যে প্রোডাক্ট গুলো তে retinoids, alpha- hydroxyl acids, azelaic acidআছে সেগুলো ব্যবহার করবেন। এগুলো ত্বক কে বলিরেখার হাত থেকে রক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে azelaic acid আর alpha- hydroxyl acid হল natural based acid.
৬. Age spot:
Age spot কে অবহেলা করবেন না। Age spot দেখা দিলে সাবধানে থাকুন। কারণ Age spot স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ত্বকে যে কোন পরিবর্তন আসলে dermatologist অর্থাৎ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান। Non-cancerous spot সাধারণত skin-bleaching প্রোডাক্ট গুলোর মাধ্যমে হালকা করা যায়।
৭. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনঃ
আপনার ত্বকে বলিরেখা দেখা দিলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বক কে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে আর ত্বক যত কম শুষ্ক থাকবে তত কম বলিরেখা বোঝা যাবে। তবে অবশ্যই সব সময় ভাল ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করবেন।
৮. ভুল ধারণাঃ
এটা একটা ভুল ধারণা যে শুধু খুব কড়া রোদের জন্যই বলিরেখা পড়বে। সূর্যের আলো গায়ে পড়বে এমন ভাবে বাড়ি থেকে বের হলে তখন অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এমন কি আপনার প্রাইভেট কার এ করে কোথাও যাওয়ার সময় গ্লাসের ভেতর দিয়ে UVA রশ্মি আপনার ত্বকের ক্ষতি করবে। তাই বাড়ির বাইরে বের হলেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৯.ঠিক মত মেকআপ না তোলাঃ
মেইকআপ করার পর সেটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করাও জরুরি। কারণ রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে যদি মেইকআপ থাকে তাহলে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মেইকআপ ত্বকের লোমকূপ ও কোলাজেন-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ত্বকের ভারসাম্যতা নষ্ট করে। ফলে ত্বকে ভাজ পড়া এবং বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই মেইকআপ করার পর ঘুমানোর আগে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার করলে ত্বকে ভাঁজ পড়ার প্রবণতা কমবে।
১০. মেকআপের সময় ত্বক টানাঃ
মেইকআপ করার সময় গালে অতিরিক্ত ঘষামাজা করা হলে এবং ত্বকে যদি অনিয়মিত টান পড়ে তাহলে ত্বকে সময়ের আগেই বলিরেখা পড়তে পারে। তাই বলিরেখা এড়াতে হালকাভাবে মেইকআপ করাই ভালো।
টিপসঃ
বলিরেখা ঠেকাতে পারে যে দ্রব্য, তার নাম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। সুতরাং বলিরেখা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সেই সকল খাদ্য বেছে নিতে হবে যাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর পরিমাণে। দেয়া হলো সেই সকল খাবারেরই তালিকা-
- অভ্যাস করুন তাজা ফল খাবার। ক্যারোটিনসমৃদ্ধ ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যেমন- পাকা কলা, পাকা পেঁপে, পাকা আম, পাকা পেয়ারা, লাল তরমুজ, বেদানা ইত্যাদি। বেছে নিন ক্যারোটিন সমৃদ্ধ রঙিন ফল।
- শাকসবজিতেও থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমাদের একান্ত পরচিত সবজি গুলোই, যেমন-পালংশাক, লাউশাক, ঢেঁড়স, গাজর, বাঁধাকপি, পাকা কুমড়া, টমেটো, ক্যাপ্সিকাম ইত্যাদিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ক্যান্সার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন নামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় টমেটো এবং তরমুজে। ত্বকের সুস্থতা এবং সজীবতা ধরে রাখতে টাটকা শাকসবজি এক অব্যর্থ ওষুধ। শসাও উপকারী তারুণ্য ধরে রাখতে। আছে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
- ডাবের পানি খাবার অভ্যাস করুন কোমল পানীয়ের পরিবর্তে। ডাবের পানি তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক।
[wp_ad_camp_2]
- খান দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার। যেমন দই, ছানা, পনির ইত্যাদি। ডিমও রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত যে ক্ষয় হয়, বয়সের যে পরিবর্তন আসে তা মূলত অক্সিডেশনের জন্য। ভিটামিন সি’তে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষাবরণকে মজবুত করে, সহজে ভেঙে যেতে দেয় না। লেবু, কাচা মরিচ, টক জাতীয় যে কোনও ফল ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস।
- রোজ খান বাদাম জাতীয় ফল। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট ইত্যাদি বাদাম খুবই উপকারী বলিরেখা ঠেকাতে। এগুলো ‘ই’ সমৃদ্ধ। চামড়া মসৃণ রাখতে কাজে আসে অনেকখানি।
- বেরি জাতীয় রসালো ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা চামড়ার জন্য উপকারী। যেমন স্ত্রবেরী, আঙ্গুর, ব্লু বেরী ইত্যাদি। কিসমিসেও তাই মিলবে এই পদার্থ
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে সবুজ চা অতুলনীয়। দৈনিক অন্তত ২ কাপ সবুজ চা বা গ্রিন টি পান করুন।
- সকালে খালি পেটে ঘৃতকুমারীর রস পান করা ভালো। চামড়ার ভাঁজ কমে আসে।
- তিল ও সূর্যমুখীর বীজেও আছে প্রচুর ভিটামিন ই। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
- মাংস খাওয়া পরিহার করে মাছ খান প্রচুর।
আমাদের পেজে লাইক দিতে ভুলবেন না।