লাইফস্টাইল

বয়স্কদের সকালে হাঁটার যত নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: একটা বয়স পর শরীরে নানান রোগবালাই বাসা বাঁধে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। আর শরীরচর্চার মাঝে হাঁটা অন্যতম। ভোরবেলায় অসংখ্য তরুণ-বৃদ্ধ হাঁটতে বের হোন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তরুণী ও বৃদ্ধার হাঁটার গতি কিন্তু একই রকম নয়। তাই বয়স হয়ে গেলে হাঁটাচলার সময় বিশেষ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।

সকালে হাঁটলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমনি নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাসও নেওয়া য়ায়। সেজন্য ছোটবড় সবাই সকালটাই বেছে নেন হাঁটার জন্য। তবে চিরন্তন সত্য হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায় অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন হয়। তার মাঝে অন্যতম হাঁটার গতি কমে আসা। এর কারণ, তাদের দেহভঙ্গী ঠিক থাকে না। এমনকি কিছুক্ষণ হাঁটার পরই তারা ক্লান্তিবোধ ও তাল হারিয়ে যেতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হাড়ের ক্ষয়, হৃদরোগ, হাঁপানি বা শরীরের কোনো অংশে ব্যথা থাকলে হাঁটাচলা আরো কঠিন হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিজিওথেরাপিস্ট ডেমিয়েন পাওয়েলের মতে, একজন সুস্থ তরুণ যখন হাঁটতে বের হয় তখন তার শরীরের নীচের অঙ্গের জোড়গুলো তাকে সম পরিমাণ শক্তি জোগায়। নিতম্ব, হাঁটু ও পায়ের পাতাগুলো-সবই সমান পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে। এর বিপরীতে এক জন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি একই গতিতে হঁটার শক্তি পান না। এর কারণ বার্ধক্যজনিত পেশীর প্রভাব বা অ্যাকিলিস টেনডন। তাই বয়স্ক ব্যক্তিদের হাটার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খুব খেয়াল রাখতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী-

হাঁটার আগে স্ট্রেচিং করুন

বয়স্করা যদি হাঁটাচলাকে ব্যায়াম হিসেবে গণ্য করেন, তাহলে হাঁটাচলা শুরুর আগে স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন। এর কারণ, বার্ধক্যজনিত কারণে মনস্তাত্বিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তখন হাঁটার ধরণ পাল্টে যায়। হাঁটা শুরুর আগে পিঠ, নিতম্ব, হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচিং করে নিন। সব বয়সের ব্যক্তিদের জন্যেই এগুলো জরুরি। তবে বৃদ্ধদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া চেয়ারে ওঠাবসা করা, পায়ের পাতার স্ট্রেচিং, অ্যারোবিকস কন্ডিশনিং ব্যায়াম-এগুলো বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার সক্ষমতা বাড়ায়।

হাঁটার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন

হাঁটার সময় ব্যক্তির মাথা সঠিক অবস্থানে রাখা উচিত। ঘাড়কে মেরুদণ্ডের একটি অংশ ভেবে নিতে হবে। মনে করতে হবে নিজেই নিজের মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করছেন। চোয়াল থাকবে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল। দ্য ভেগা মেথডের প্রবর্তক জো ভেগা বলেছেন, হাঁটার সময় পায়ের গোড়ালি সবার আগে মাটি স্পর্শ করবে, এরপর মাটি ছোঁবে পায়ের সামনের অংশ। আর পা তোলার সময় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল মাটিতে ধাক্কা দেবে। এছাড়া হাঁটার সময় হাতের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এ সময় হাত কনুই থেকে ভাঁজ হয়ে থাকবে। ছোট ছোট পদক্ষেপ করতে হবে কিন্তু পা চলাতে হবে দ্রুত। এর ফলে গতি বাড়ার পাশাপাশি শরীরের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।

সব সময় মোবাইল সাথে রাখুন

ইচ্ছে করলে হাঁটার সময় গান শুনতে পারেন বয়স্ক ব্যক্তিরা। স্ট্রোক থেকে সেরে ওঠা রোগীরা যদি হাঁটার সময় গান শোনার অভ্যাস করেন, তবে তাদের হাঁটার গতি যেমন বাড়বে তেমনি প্রতি ধাপের দূরত্বও বাড়বে। শরীরের তাল বজায় রাখতেও সুবিধা হবে। তবে এক্ষেত্রে রাস্তার পাশে হাঁটলে গান না শোনাই ভালো। এতে বেখায়াল হয়ে দুর্ঘটনা হতে পারে। এজন্য বার্ধক্য জনিত যেকোনো অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায়, সেসময় সাহায্যের জন্য বয়স্করা অবশ্যই মোবাইল রাখবেন হাঁটতে গেলে। নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং জরুরি সময়ে যোগাযোগ করবেন এমন ব্যক্তির ফোন নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।

উপযুক্ত জুতা পরুন ও ভারী ব্যাগ বর্জন করুন

হাঁটার সময় পায়ে সাপোর্ট দিতে পারে এমন জুতা নির্বাচন করুন। ঢিলেঢালা জুতা পরে হাঁটলে গতি কমে আসে। আবার অতিরিক্ত নরম জুতাও হাঁটার জন্য উপযোগী নয়। এর পরিবর্তে খুব শক্ত না, আবার খুব নরম না-এমন জুতা পরে হাঁটুন। এর ফলে ব্যথাও কম হবে। এছাড়া হাঁটার সময় সঙ্গে ভারী ব্যাগ সাথে রাখবেন না। হাতে পানির বোতলও রাখবেন না।। এসব অসম ওজনে হাঁটার সময়ে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *