লাইফস্টাইল ডেস্ক, সুখবর ডটকম: থাইরয়েড গ্রন্থিটি দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কয়টি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি দেহের সামগ্রিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, থাইরয়েড তাদের অন্যতম। থাইরয়েডের সমস্যা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে, যা দেহের থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলে। এখন অনেকেরই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে, নারীদের এই ঝুঁকি বেশি।
▶ লক্ষণ-
ওজন বৃদ্ধি বা ওজন হারানো-
থাইরয়েড বৈকল্যের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো শরীরের ওজন পরিবর্তন, যার ব্যাখ্যা হঠাৎ পাওয়া যায় না। ওজন খুব বেড়ে গেলে বোঝা যায়, থাইরয়েড হরমোনের মান বেশ কমে এসেছে। অন্যদিকে, থাইরয়েড যদি শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ করতে থাকে, তখন শরীর অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হারাতে থাকে।
গলায় স্ফীতি-
গলায় স্ফীতি থাকলে একটি দৃশ্যমান ক্লু থাকল যে থাইরয়েডে কোনো গন্ডগোল আছে। একে বলে গলগণ্ড বা গয়টার। হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম দুটোর ক্ষেত্রে গলায় স্ফীতি হতে পারে।
হৃৎস্পন্দন হারে পরিবর্তন-
এই হরমোন প্রভাব ফেলে হৃৎস্পন্দন হারের ওপরও। যাদের থাইরয়েডগ্রন্থির লঘু ক্রিয়া বা হাইপোথাইরয়েডিজম হয়, তাদের হৃৎস্পন্দন হার স্বাভাবিক থেকে ধীরগতির হয়। আবার থাইরয়েডের অতিক্রিয়া বা হাইপারথাইরয়েডিজম হলে হৃদযন্ত্র চলে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতহারে। বেড়ে যায় রক্তচাপ, ধুকপুক বাড়ে।
দেহের বলশক্তি ও মনমেজাজে আসে পরিবর্তন-
থাইরয়েডযন্ত্র লঘুতালে চললে খুব ক্লান্তি লাগে, শ্লথ হয়ে যায় শরীর, বিষণ্নতা আচ্ছন্ন করে পুরো শরীর ও মনকে। আর থাইরয়েডের ক্রিয়া বেড়ে গেলে উদ্বেগ বাড়ে, ঘুমের সমস্যা হয়, মন হয় অস্থির ও উত্তেজিত।
চুল পড়ার সমস্যা-
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায়, চুল পড়া একটি সাধারণ লক্ষণ। হাইপো ও হাইপারথাইরয়েডিজম দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে কেশ হানি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড সমস্যা দূর করা গেলে আবারও চুল গজানো শুরু হতে পারে।
অতিরিক্ত শীতল বা উষ্ণ অনুভব-
থাইরয়েডে সমস্যা হলে দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ক্রিয়া লঘু হলে শরীরে শীতল বোধ হয় এবং ক্রিয়া অতিরিক্ত হলে প্রতিক্রিয়াটি হয় ঠিক বিপরীত।
এ ছাড়া থাইরয়েডের লঘু ক্রিয়ায় শুষ্ক ত্বক ও ভঙ্গুর নখ, হাতে অবশবোধ ও ঝিনঝিন অনুভূতি, কোষ্টকাঠিন্য ও অস্বাভাবিক ঋতুস্রাব হতে পারে। থাইরয়েডের অতিক্রিয়ায় হতে পারে হাতে কম্পন, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা, পাতলা পায়খানা ও অনিয়মিত ঋতুস্রাব।
▶ থাইরয়েড ভালো রাখার সহায়ক খাবার সম্পর্কে জেনে নিন-
সবুজ পাতা: পালং শাক আর লেটুস আপনার খাবারের তালিকায় নিয়মিত রাখুন। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও নানা খনিজ। সবুজ পাতা আপনার থাইরয়েডকে সুস্থ রাখবে। ফলে শরীরও থাকবে সুস্থ।
বাদাম: বাদামজাতীয় খাবার নিয়মিত খাবেন। বিশেষ করে কাজুবাদাম। এ ছাড়া কুমড়ার বীজও কাজের। এতে আছে আয়রন ও সেলেনিয়াম, যা থাইরয়েড ভালো রাখে।
সামুদ্রিক খাবার: সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর আয়োডিন থাকে বলে তা থাইরয়েড ভালো রাখে। এ গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বাড়াতে আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ বলে সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ির মতো খাবার খেতে পারেন।
আয়োডিনযুক্ত খাবার: ঠিকমতো কাজ চালাতে থাইরয়েডে আয়োডিনের প্রয়োজন পড়ে। বাড়িতে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে পারেন।
ডিম: ডিমে আছে সেলেনিয়াম। এই খনিজ থাইরয়েডের টি৪ হরমোনকে রূপান্তর করে কার্যকর টি৩ হরমোনে পরিণত করে। তাই থাইরয়েড সুস্থ রাখতে ডিম খেতে পারেন।
থাইরয়েডের কাজকর্ম স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত ৩৫ বছর বয়স হলেই। এরপর প্রতি পাঁচ বছরে একবার। এ ক্ষেত্রে অন্তত রক্তের টিএসএইচ মান ও প্রয়োজনে টি-৩ ও টি-৪ মান দেখা উচিত।
এমএইচডি/আইকেজে
আরো পড়ুন: