ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: ফাইজার ও বায়োএনটেক যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) কাছে তাদের টিকা ব্যবহারের জরুরি অনুমোদন চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বোরলা একে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘‘অত্যন্ত গর্ব এবং আনন্দের সঙ্গে…কিছু স্বস্তির সঙ্গেও আপনাদের জানাচ্ছি যে, আমাদের কোভিড-১৯ টিকার জরুরি অনুমোদনের আবেদন এখন এফডিএ কর্তৃপক্ষের হাতে।”
বিবিসি জানায়, শুক্রবার তারা এফডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের আবেদনপত্র জমা দেয়। তবে কবে নাগাদ অনুমোদন পাওয়া যাবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার আশা করছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই টিকার অনুমোদন পাওয়া যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার এবং তাদের জার্মান পার্টনার বায়োএনটেক গত বুধবার তাদের কোভিড-১৯ টিকা মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে ঘোষণা দেয়। ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের বেলায় তা ৯৪ শতাংশের বেশি কার্যকর। এই বয়সের মানুষদেরই কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর ঝুঁকি সব থেকে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয়ই আবার উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। গত জুনের পর দেশটিতে গত বৃহস্পতিবার আবার দৈনিক মৃত্যু দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় ফাইজারের টিকা দেশটির জন্য আশার আলো হয়ে আসবে।
কবে নাগাদ টিকা পাওয়া যাবে?
যদি এফডিএ আগামী মাসের প্রথমার্ধে টিকার অনুমোদন দিয়ে দেয় তবে ‘অনুমোদন পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা টিকা বিতরণ করতে প্রস্তুত আছে’ বলে জানায় ফাইজার ও বায়োএনটেক।
প্রথম দিকে কারা টিকা পাবেন সেটা নির্ধারণ করবে ‘দ্য সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসিপি)।
সিইও বোরলা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিশ্বের হাতে কোভিড-১৯ এর একটি টিকা তুলে দিতে আমরা যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, টিকার জরুরি ব্যবহারের আবেদন সেই যাত্রা পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
ফাইজারের টিকা কতটা কার্যকর?
ফাইজার ও বায়োএনটেক তাদের টিকার শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক যে ডেটা প্রকাশ করেছে তাতে, তাদের টিকা সব বয়সের মানুষের উপর প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর। বিশেষ করে ৬৫ বছরের উপরের বয়স্ক মানুষের বেলায় এটি ৯৪ শতাংশের বেশি কার্যকর।
বিশ্বের কয়েকটি দেশে ৪৩ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী ফাইজারের টিকার শেষ ধাপের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাদের কারো কারো শরীরে মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা গিয়েছিল এবং সেগুলো দ্রুত সেরেও যায়।
গত বুধবার ফাইজারের ঘোষণা আসার মাত্র দুইদিন আগে মডার্না তাদের কোভিড-১৯ এর টিকা ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছিল। গত সোমবার মডার্না তাদের শেষ ধাপের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলের প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনকার কোভিড-১৯ এর টিকারও শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। যেটির প্রয়োগে মানবদেহের টি-সেল খুব ভালোভাবে সাড়া দিচ্ছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের। যা মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিবডি তৈরির ইঙ্গিত দেয়।
চীন ও রাশিয়ার দুইটি কোম্পানিও কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে রয়েছে। তাদের টিকারও শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
গত বছর ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আক্রান্ত সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি। থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অস্বাভাবিকতা।
টিকাই এ রোগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হবে বলে আশা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।