ক্যারিয়ার ও চাকরি

কি কারণে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ফেল হতে পারে?

ক্যারিয়ার প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: মোট নম্বরের ৫০% নম্বর পেলেই বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাস সম্ভব, তাই এটি প্রিলিমিনারি ও মৌখিক পরীক্ষার চেয়ে তুলনামূলক সহজ ধাপ। তবুও প্রতি বিসিএসেই একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও সংশ্লিষ্ট পরিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এর পেছনের কারণগুলো সম্পর্কে জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা

প্রতি বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় একটা বড়সংখ্যক প্রার্থী অন্য চাকরিতে ব্যস্ত থাকায় বা আশানুরূপ প্রস্তুতি নিতে না পারায় লিখিত পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকেন বা প্রথম দিনের পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ফলে অনুপস্থিত থাকায় সেসব প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়। কোনো প্রার্থী জেনারেল বা প্রফেশনাল ক্যাডারে মোট নম্বরের ৫০% নম্বর (৪৫০ নম্বর) পেলেও কোনো একটি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির জন্য লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবেন। কারণ, পিএসসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুসারে লিখিত পরীক্ষার সব বিষয়ে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।

ফুল আনসার না করা

অনেক প্রার্থীই লিখিত পরীক্ষার পূর্বের তিন–চার মাস সারা দিন পড়াশোনা করে সিলেবাস শেষ করেন, কিন্তু লেখার চর্চা বা মডেল টেস্ট দেন না বা পরীক্ষার হলের সময়বণ্টন অনুসরণ করেন না বা হাতের লেখা ধীরগতির হওয়ায় পরীক্ষার খাতায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতে পারেন না। ফলে ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৭০০–৮০০ নম্বর উত্তর করে ৪৫০ নম্বর (পাস নম্বর) তোলা তাদের জন্য অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়।

হাতের লেখার দুর্বোধ্যতা

অনেক প্রার্থীই অনেক জেনে বা তথ্যসমৃদ্ধ হয়েও দুর্বোধ্য হাতের লেখার জন্য নিজের জানা বিষয়গুলো সম্পর্কে পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে ব্যর্থ হন, ফলে সেই লেখা বা তথ্যগুলো প্রার্থীর কোনো কাজেই আসে না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে হাতের লেখা অনিন্দ্য সুন্দর না হলেও সেটি যেন পাঠযোগ্য হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা অত্যাবশ্যক।

অপ্রাসঙ্গিক উত্তর

একাডেমিক পরীক্ষায় গতানুগতিক লিখে পাস করা সম্ভব হলেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সেটি পরীক্ষকের বিরক্তির উদ্রেক করাতে পারে। তাই ভালো নম্বর তুলতে হলে প্রার্থীকে গতানুগতিক লেখার পরিবর্তে তথ্যসমৃদ্ধ ও টু দ্য পয়েন্ট লেখার চর্চা করতে হবে।

অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি

অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিতে একজন প্রার্থী জানা প্রশ্নের উত্তর যেমন সুন্দর করে লিখে আসতে পারেন না, তেমনি নতুন ও আনকমন প্রশ্ন ধারণা থেকে লিখেও আসতে পারেন না। ফলে পরীক্ষা খারাপ হয় এবং নিগেটিভ রেজাল্ট আসে। তাই লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে হলে পরীক্ষার সিলেবাসের সব টপিক সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা হলেও রাখতে হবে।

অসত্য মনগড়া উত্তর

প্রার্থীর অসত্য এবং মনগড়া উত্তরে পরীক্ষক যেমন বিরক্ত হন তেমনি প্রার্থী সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণাও পোষণ করেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন ভাবী কর্মকর্তা থেকে পরীক্ষক যেমন দৃষ্টিভঙ্গি ও উত্তর প্রত্যাশা করেন, পরীক্ষার খাতায় সেটির ব্যত্যয় প্রার্থীকে আশানুরূপ ফল নাও দিতে পারে।

পরীক্ষার কেন্দ্রের শৃঙ্খলা ভঙ্গ

পরীক্ষা কেন্দ্রের সাধারণ নিয়মনীতিগুলোর ব্যত্যয় হলে প্রার্থীর খাতা বাতিল বা প্রার্থী বহিষ্কৃত হতে পারেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো পরীক্ষার প্রবেশপত্রে রাফ করা বা কোনো কিছু লেখা, যা অসদুপায় অবলম্বনের সমমানের অপরাধ।

 

  • বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থী বোথ ক্যাডারের জন্য আবেদন করেও শুধু জেনারেল বা প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডারে উত্তীর্ণ হতে পারেন। একজন প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার ফল তৈরি করা হয় জেনারেল ও প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল আলাদা আলাদা বিবেচনায়।

ক. জেনারেল ক্যাডারপ্রত্যাশী প্রার্থীকে জেনারেল ক্যাডারের ৯০০ (বাংলা ১ম ও ২য় পত্র–২০০, ইংরেজি-২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি-২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-১০০, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-১০০, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা-১০০) নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫০ নম্বর পেতে হবে। একজন প্রার্থী কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শূন্য পেলেও মোট নম্বরের ৫০% হিসেবে ৪৫০ নম্বর পেলে তিনি জেনারেল ক্যাডারে পাস করেছেন বলে বিবেচিত হবেন।

খ. প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডারপ্রত্যাশী প্রার্থীকে প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডারের ৯০০ (বাংলা ১ম পত্র-১০০, ইংরেজি-২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি-২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-১০০, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা-১০০, প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডার–সংশ্লিষ্ট বিষয়-২০০) নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫০ নম্বর পেতে হবে। একজন প্রার্থী কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে শূন্য পেলেও মোট নম্বরের ৫০% হিসেবে ৪৫০ নম্বর পেলে তিনি প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডারে পাস করেছেন বলে বিবেচিত হবেন।

গ. যে প্রার্থী ক ও খ—দুই ক্যাটাগরিতেই পাস করেছেন, তিনি বোথ ক্যাডারে উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবেন।

দ্রষ্টব্য: কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ৩০% (১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৩০ নম্বর এবং ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬০ নম্বর) এর কম নম্বর পেলে প্রার্থী সে বিষয়ে শূন্য নম্বর পেয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।

আরো পড়ুন:

আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রশ্নফাঁসের ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *