নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: এমব্রয়ডারি নকশা, ফ্যাশনে নকশার যে ধারাটি কখনো পুরনো হয় না। ঘুরে ফিরে এমব্রয়ডারি সব সময়ই নতুন।
সুঁই-সুতার নকশা পোশাকে নিয়ে আসে এক শৈল্পিক সৌন্দর্য। সুঁইয়ের ফুড়ে রঙ-বেরঙের সুতার নকশা কাপড়ে ফুটিয়ে তোলার ঐতিহ্য হাজার বছরের। সুঁই আর সুতার ছন্দময় গতিতে খুব সাধারণ পোশাকের জমিন অনায়াসেই হয়ে ওঠে অনন্য। সুঁই-সুতার ফোড়ে পোশাকে নকশা করার ইতিহাস অনেক পুরনো।
আধুনিক যুগে সুঁই-সুতার ফোড়ের নকশার এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন, হাতের সুঁইয়ের পাশাপাশি বহুদিন ধরেই নকশা বুনে নেওয়া যাচ্ছে মেশিনেও। যাকে বলা হয় মেশিন এমব্রয়ডারি। নিত্যদিনের ব্যস্ততায় অথবা কোনো দাওয়াতে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন এমব্রয়ডারি নকশার পোশাক।
শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, গাউন, টপস, ফতুয়া, পাঞ্জাবিসহ প্রায় সব ধরনের পোশাকেই রয়েছে এমব্রয়ডারির উজ্জ্বল উপস্থিতি। জর্জেট, শিফন মতো ট্রেন্ডি শাড়ি ছাড়াও বর্তমানে সুতি, টাঙ্গাইল, সিল্ক, মসলিনের মতো ট্রেডিশনাল শাড়িতেও এমব্রয়ডারি নকশা ব্যবহার হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, এ যুগের নারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এমব্রয়ডারি নকশার পোশাক। ফ্যাশনেও এই নকশার বেশ আধিপত্য। এমব্রয়ডারি নকশার মোটিফ হিসেবে বর্তমানে সব থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে ফুল এবং জ্যামিতিক নকশা। ছোট-বড় নানা ধরনের ফুলের নকশা দেখা যাচ্ছে পোশাকে। জ্যামিতিক নকশাগুলো যেমন বৃত্ত, বিন্দু, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজের নকশা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সরল রেখা ধরে।
এ ধরনের নকশার পরিকল্পনা পোশাকে এক ধরনের শক্ত এবং দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে। আবার কখনো যদি একটু এলোমেলো করে করা হয় নকশা, তাতে এক ধরণের উচ্ছলতা চলে আসে পোশাকে। এমব্রয়ডারির সুতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রকমের সুতা। সুতার মান এবং কাউন্টে থাকে ভিন্নতা। সাধারণ সুতার চেয়ে জরি এবং রেশমি সুতার ব্যবহারে এমব্রয়ডারি নকশাই নজর কাড়ে বেশি।
সুতার ফোড়ের ব্যবহার হচ্ছে স্ট্রেইট, চেইন, জিগজাগ, রানিং, ব্যাক, স্যাটিন ইত্যাদি। হালফ্যাশনে পুরো পোশাকজুড়ে সুঁই-সুতার নকশা নয় বরং পোশাকের বুকের অংশে অথবা নিচের বর্ডার, লম্বালম্বি, হাতা, গলায় নকশা পছন্দ করছেন ক্রেতারা। সালোয়ার হচ্ছে কামিজের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে ওড়নায় থাকছে হালকা কাজ। টপস বা সিঙ্গেল কামিজে বুকের নকশা প্রাধান্য পাচ্ছে। কামিজের হাতায়ও থাকছে ভারি কাজ। বাদ যাচ্ছে না পেছনের অংশও। কখনো কখনো পুরো পোশাকেই থাকছে এমব্রয়ডারি নকশা। শাড়ির আঁচল আর পাড়ে এমব্রয়ডারির ব্যবহার বেশি। পাঞ্জাবির হাতার বর্ডার আর গলায় ব্যবহার হচ্ছে ছিমছাম নকশা।
পার্টি পোশাক কিংবা গর্জিয়াস নকশা ফুটিয়ে তুলতে এমব্রয়ডারির সাথে চুমকি, স্টোন, কারচুপি ব্যবহার এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাথে পট্রি, পাইপিং, লেইস ব্যবহার করে পোশাককে করে তোলা হচ্ছে আরও নজরকাড়া। সালোয়ার-কামিজে জমকালো ভাব আনতে কামিজের কাজগুলো ভারি রাখা হচ্ছে। সুতি, সিল্ক, জর্জেট, মসলিন, ধুপিয়ানসহ প্রায় সব ধরণের কাপড়েই এম্ব্রয়ডারি নকশা ব্যবহার হয়। এ ধরনের ফেব্রিক শীতে আরামদায়কও।
সাধারণত একটি পোশাকে দুই থেকে চারটি রঙের সুতার ব্যবহার করতে দেখা যায় নকশার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পোশাকের কাপড়ের রঙের বিপরীত রঙের সুতার নকশা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়। কখনও আবার একরঙা কামিজের বডিতে একই রঙের কয়েকটি শেডের সুতার কাজ করা হচ্ছে, অনেক সময় আবার পোশাকের রঙের একশেড হালকা বা গাঢ় রঙের সুতার ব্যবহারে ফুটে উঠে আভিজাত্য।
তবে পোশাকের নকশা কম জমকালো হলে বেশি মানিয়ে যায় বিপরীত রঙের সুতার ব্যবহার। শীতে গাঢ় রঙ আরামদায়ক ও নজর কাড়ে। তাই এই ঋতুতে এমব্রয়ডারি নকশার জন্য বেছে নেয়া হচ্ছে উজ্জ্বল শেডের সুতা। লাল থেকে শুরু করে নীল, সবুজ, বেগুনি, কমলা, ম্যাজেন্টাসহ প্রায় সব ধরনের উজ্জ্বল রঙেই রাঙানো হচ্ছে এখনকার পোশাক। একরঙা এমব্রয়ডারি নকশার বদলে এক পোশাকে কয়েক রঙের সুতার ব্যবহার এখন বেশি জনপ্রিয়।
এমব্রয়ডারি নকশায় ফরমায়েশ করে বানানোর ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে যেন হিজিবিজি নকশা না হয়ে যায়। এতে সুতার ব্যবহারের পরে নকশা দেখতে স্বস্তি পাওয়া যাবে না। সুতা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এমন সুতা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। জরি সুতা ব্যবহার করা হলে পোশাকের ভেতরের অংশে দিতে পারেন আলাদা কোনো কাপড়। নয়তো এ ধরনের সুতা শরীরের সঙ্গে সরাসরি স্পর্শে অস্বস্তি তৈরি করবে।
আরো পড়ুন: