সর্বশেষ

অবশেষে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছে


বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে বেশ খানিকটা কমেছে। চার দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলারের মতো কমে রোববার ৮০ দশমিক ৬৯ ডলারে নেমে এসেছে।
বেশ কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বাড়তে ২৭ অক্টোবর ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাত বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৪ সালের পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ওই প্রথম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়ায়।
এরপর একটু একটু করে কমে গত ১০ নভেম্বর ৮৪ দশমিক ৫০ ডলারে নেমে আসে। গত চার দিনে তা টানা কমে রোববার ৮০ দশমিক ৬৯ ডলারে নেমে এসেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। আর এ খবরে গত সপ্তাহের উত্তাল জ্বালানি তেলের বাজার নিম্নমুখী হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক লুইস ডিকসন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের উত্তাল বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। এটা একটা ভালো খবর। আরও ভালো খবর এই যে, তেলের বাজার কেবল সরবরাহ-চাহিদা গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত হয় না, বরং আর্থিক নীতির পূর্বাভাস এবং সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমেও প্রভাবিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ সুদের হার ডলারকে আরও সহায়তা দেবে এবং তেলের দামের ওপর আরও নিম্নমুখী চাপ দেবে।’
অবশেষে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমছেফাইল ছবিরোববার অপরিশোধিত ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের চেয়ে ৯০ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৮০ দশমিক ৭৯ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ৭০ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৮২ দশমিক ১৭ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২৭ অক্টোবর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে ৮৫ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে। ৮ নভেম্বর এর দর ছিল ৮২ দশমিক ৫ ডলার। এক মাস আগে ১৬ অক্টোবর দাম ছিল ৮০ ডলার। আর এক বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার।
প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) গত জুলাইয়ের শুরুতে এক পূর্বাভাসে বলেছিল, বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা আগামী বছরের শেষ দিকে আবার করোনাভাইরাস শুরু হওয়ায় আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
সংস্থাটির (আইইএ) মতে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা মোটামুটি বাড়বে। তবে আগামী বছর জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা বেড়ে ১০ কোটি ৬ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসও মাস তিনেক আগে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, কোভিড-১৯-এর কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা দেখা গিয়েছিল, তা দূর হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬ ডলার, জুলাইয়ে ৭৩ ডলার এবং আগস্টে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যাবে।
কিন্তু নভেম্বর থেকে তা হোঁচট খেয়ে নিম্নমুখী হয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে গত ৪ নভেম্বর থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *