ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: অন্যের উপকারে কিছু করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সেটা অর্থ দিয়ে হতে পারে, কাজ দিয়ে হতে পারে, ভালো কথা দিয়ে হতে পারে, এমন কি মুখের হাসি দিয়েও হতে পারে। পদ্ধতিগত গবেষণায় এমন ফল পাওয়া গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিহেভরিয়াল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি পেপারে ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর প্রফেসর স্টিফেন জি পোস্ট প্রমাণ করেছেন যে কীভাবে সহমর্মিতা, সমব্যথিতা ও অন্যের সাহায্য ও উপকার করার মনোভাব একজন মানুষের সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং তাকে দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে।
এক দল গবেষক বেশ কয়েকজন বিষণ্ণ ও উদ্বিগ্ন প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর একটি এক্সপেরিমেন্ট চালান। এর পুরো ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ক্লিনিকেল সাইকোলজি জার্নালে।
গবেষকরা ঠিক করেন যে তারা দু’ভাবে চেষ্টা করবেন সেই মানুষদের বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ কাটাতে –
১) বিষণ্ণ ও উদ্বিগ্নরা চেষ্টা করবেন অন্যদের কাছে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে, যে তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা বা দুর্বলতা নেই। তারা অন্যের কাছে নিজেদের একটি ইমেজ দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন।
২) আরেক দল বিষণ্ণ ও উদ্বিগ্ন মানুষ অন্য মানুষদের সাহায্যে কিছু করবেন।
দেখা গেছে যে যারা প্রথম উপায়টি অবলম্বন করেছেন তারা মানসিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে গেছেন।
আর যারা দ্বিতীয় উপায় অবলম্বন করেছেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ অনেক কমে গেছে। এবং সেই সাথে তাদের আশেপাশের মানুষদের সাথে সম্পর্কও আরও ভালো হয়েছে যা তাদের দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকতে আরও সাহায্য করবে।
এছাড়া বিভিন্ন গবেষণার পর গবেষকরা মোট ৭টি কৌশল দাঁড় করিয়েছেন যা যে কেউ দৈনন্দিন জীবনে চর্চা করে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও বেশি ভালো থাকতে পারে –
১। একে অপরকে সাপোর্ট করা। অন্যের খুশিতে উচ্ছসিত হওয়া, অন্যের দুঃখে সমব্যথী হওয়া এবং তা প্রকাশ করা।
২। অন্যের ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা।
৩। কারও জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলা। হতে পারে ভালো কথা দিয়ে বা পাশে বসে একটু সময় কাটিয়ে, তার সুখ দুঃখের কথা শুনে।
৪। ইতিবাচক কথা বলে ও গঠনমূলক মন্তব্য করে। কথার শক্তির ব্যাপারে আমরা সবাই সচেতন। একটু ভালো কথা আরেকটা মানুষের ওপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তার দৈনন্দিন কাজে আরও উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতে পারে।
হয়তো যিনি আপনার ঘরে প্রতিদিন রান্না করছেন, তার রান্নার প্রশংসা করলেন। তিনি হয়তো প্রশংসা না করলেও আপনার জন্যে রান্নাটা করতেন। কিন্তু আপনার কথার প্রভাবে তার কাছে কাজটা আরও আনন্দদায়ক হতে পারে।
৫। অন্যের ক্ষতি হয় বা কষ্ট পায় এমন কাজ বা কথা থেকে বিরত থাকা।
৬। শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে না ভাবা। নিজের পাশাপাশি আশেপাশের মানুষদেরকেও কীভাবে আরও ভালো রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা।
৭। যতদূর সম্ভব অন্যদের জন্যে জীবনটা সহজ করে দেয়া। এটা খুব ছোট খাটো ব্যাপারেও হতে পারে। যেমন বেসিনে থালা-বাসন ফেলে না রাখা, এই ভেবে যে অন্যরা পরিষ্কার করবে। বা কারও কাপড় ইস্ত্রি করে দেয়া, হাতের কাজটা একটু এগিয়ে দেয়া ইত্যাদি।
তার মানে এই সময়টা বাসায় থেকেও আপনি চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন আত্মীয়-পরিবার-বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আপনার সম্পর্কটাকে আরও সুন্দর, আরও মজবুত করার।
আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও পড়বে চমৎকার। ফলে শুধু করোনাই নয়, অনেক ধরনের রোগ থেকে আপনি আপনার স্বাস্থ্যকে অটুট রাখতে পারবেন এবং দীর্ঘজীবী হবেন।