রবিবার, অক্টোবর ১, ২০২৩
spot_img
Homeপ্রচ্ছদস্যামসাং ফ্রিজ এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে

স্যামসাং ফ্রিজ এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে

ধূমকেতু রিপোর্ট : স্যামসাং নামটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে চেনা। এ দেশে ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হয় স্যামসাংয়ের টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য। দেশে মানুষের হাতে হাতে স্যামসাং ব্র্যান্ডের মুঠোফোন।

নতুন খবর হলো, স্যামসাংয়ের ফ্রিজের মোড়কে এখন লেখা থাকে বাংলাদেশে তৈরি বা মেড ইন বাংলাদেশ।

ঢাকার অদূরে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের কারখানায় এখন তৈরি হয় স্যামসাংয়ের ফ্রিজ।

দেশজুড়ে বিভিন্ন দোকানে স্বল্প ও মধ্যম দামে স্যামসাংয়ের যেসব ফ্রিজ বিক্রি হয়, সেগুলো ওই কারখানায় উৎপাদিত। যেখানে কাজ করেন বাংলাদেশি শ্রমিকেরা।

ফেয়ার ইলেকট্রনিকস বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের অন্যতম পরিবেশক। তাদের কারখানাটি তৈরি হয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের কারিগরি সহায়তায়। প্রায় ১৬ একর জমির ওই কারখানায় ফেয়ার গ্রুপ বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

ফেয়ার ইলেকট্রনিকস বলছে, বাংলাদেশে উৎপাদন করায় স্যামসাং পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু মান অন্য যেকোনো দেশের সমতুল্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ে বরং প্রশ্ন কম।

জানতে চাইলে ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশে উৎপাদিত স্যামসাং পণ্যের মান কোরিয়া, ভিয়েতনাম অথবা থাইল্যান্ডে তৈরি পণ্যের মতোই। কোনো পার্থক্য নেই। বাংলাদেশে তৈরি ফ্রিজ ও সংযোজিত মুঠোফোন বাজারে ছাড়ার পর দেখা যাচ্ছে, ত্রুটি-বিচ্যুতি আগের চেয়ে কম।’

দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট স্যামসাংয়ের বিশ্বের ৩৯টি স্থানে কারখানা রয়েছে। ৩৫ স্থানে তারা গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি করেছে। ৭টি কেন্দ্রে তাদের পণ্যের নকশা করা হয়। বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের টেলিভিশন উৎপাদন করে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস।

ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের কারখানাটি চালু হয় গত বছরের জুলাইয়ে। বাজারে এখন যেসব স্যামসাং ফ্রিজ ও মুঠোফোন বিক্রি হয়, তার বড় অংশ ওই কারখানায় তৈরি অথবা সংযোজন করা। উচ্চমূল্যের কিছু ফ্রিজ ও মুঠোফোন এখনো আমদানি করা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গত শনিবার ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের কারখানাটি পরিদর্শন করতে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংস্থাটির কয়েকজন সদস্য। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিককেও কারখানাটি ঘুরিয়ে দেখায় ফেয়ার গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার এক পাশে ফ্রিজ তৈরির প্রকল্প, অন্য পাশে সংযোজিত হয় স্যামসাং ব্র্যান্ডের মুঠোফোন।

কর্তৃপক্ষ জানায়, কারখানায় মোট ৬০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মীদের একটি অংশকে কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। আবার কোরিয়া থেকে স্যামসাংয়ের কর্মীরা এসেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

মুঠোফোন সংযোজন কারখানায় কাজ করছিলেন আইরিন আক্তার নামের এক তরুণী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাই তাঁর প্রথম চাকরি। কারখানায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি কাজটি শিখেছেন।

ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমিকেরা খুবই ভালো। তারা দ্রুত শিখতে পারে। তবে আমাদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোক বেশি দরকার।’

ফেয়ার গ্রুপ জানায়, দেশে তৈরির মাধ্যমে স্যামসাং ফ্রিজের দাম বেশ কিছুটা কমিয়ে এনেছে তারা। ফলে দেশে বছরে বিক্রি হওয়া ২০ লাখ ফ্রিজের বাজারে স্যামসাংয়ের হিস্যা বেড়েছে। দেশে স্যামসাং ফ্রিজের মূল্য সংযোজন হয় ৩৫ শতাংশের মতো, যা শিগগিরই ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে জানান রুহুল আলম আল মাহবুব।

তিনি বলেন, মোবাইলে মূল্য সংযোজন ১০ শতাংশের মতো। তবে তাঁরা মুঠোফোনের মাদারবোর্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। সেটা শুরু হলে মূল্য সংযোজন বাড়বে। এ জন্য নীতি সহায়তা দরকার।

কারখানা ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সরকার নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চায়। দেশে কারখানা হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

তিনি বলেন, দেশীয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী অন্যান্য কারখানাও তিনি ঘুরে দেখবেন। তাঁদের সমস্যাগুলো জানবেন। এরপর আগামী বাজেটে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments