স্বাস্থ্য প্রতিবেদক: আমাদের দেহের মেলানোসাইট মেলানিন তৈরি করা বন্ধ করে দিলে সাদা সাদা প্যাচের মতো তৈরি হয়। আর একে শ্বেতী রোগ বলে। বর্তমানে শ্বেতী রোগের বেশ উন্নত চিকিৎসা রয়েছে।

শ্বেতী রোগের চিকিৎসার বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। তার সাথে আলোচনা করেন ডা. সানজিদা হোসেন।

প্রশ্ন : শ্বেতী রোগী মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় রোগী ও তাদের আশপাশের লোকেদের কীভাবে আশ্বস্ত করেন?

উত্তর : শ্বেতী রোগ নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছি আপনি জানেন। প্রতিদিন প্রায় ১০০ রোগীও দেখেছি শ্বেতী রোগের। আজ প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে কাজ করছি। শ্বেতী রোগীদের সঙ্গে আমার অনেক মেশার সুযোগ হয়েছে। তাদের কষ্ট, দুঃখ, বঞ্চনা এগুলো আসলে আমাকে খুব স্পর্শ করে।

দুটো বিষয় রয়েছে, আমরা প্রথমেই মোটা দাগে ভাগ করে নিই। শরীরের কতটুকু হলো সেটি দেখি। যদি কারো ৫০ ভাগের বেশি সাদা হয়ে যায়, তাকে উন্টার প্রোসেস বলি আমরা। আর কালো করতে দেই না। আমরা ডি পিগমেন্টিং প্রক্রিয়ায় চলে যাই। উল্টো আরো সাদা বানিয়ে দেই। কিছু কিছু জিনিস রয়েছে এগুলো ব্যবহার করে আরো সাদা বানিয়ে দেই। আরেকটি বিষয় দেখি যে রোগটি ৫০ ভাগের নিচে কি না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগটি ট্রিটমেন্ট রেজিসটেন্স কি না, সেটি দেখা। অর্থাৎ রোগের চিকিৎসা করা যাচ্ছে কি না। এমন হলে আমরা সার্জারিতে চলে যাই। আর কিছু আলোকপাত করার মতো বিষয় রয়েছে। যেমন : অ্যাক্রোফেসিয়াল। এটি ট্রিটমেন্ট রেজিসটেন্স। অর্থাৎ চিকিৎসা করা যায় না।

অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। আমরা ওষুধ খেতে দেই। লাগাতে দেই। ফোটো থেরাপি রয়েছে। এক্সাইমার লেজার রয়েছে, সার্জারি রয়েছে- এগুলো করি। এক একটি রোগীর ক্ষেত্রে আমরা একেক ধরনের চিকিৎসা করি। কার কোন চিকিৎসায় ভালো হবে সেটি বুঝে চিকিৎসা করা হয়।

প্রশ্ন : সার্জারি করে কি ভালো হয়?

উত্তর : হ্যাঁ, সার্জারি করে ভালো হয়। সার্জারি করার জন্য প্রথমে এটি স্থিতিশীল কি না জানতে হবে। বইপত্রের কথা অনুযায়ী স্থিতিশীল মানে হলো এক বছর ধরে কোনো কিছু বাড়ছে না। কমার দিকে রয়েছে, বাড়ার দিকে নয়। তবে আমার অভিজ্ঞতায় দেখছি ছয় মাস স্থিতিশীল থেকেও অনেক সময় সার্জারি করে ফেলা যায়। এর ফলাফলও খারাপ হয় না।

আরেকটি বিষয় রয়েছে কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে হাজার মেডিকেল চিকিৎসা দিলেও কাজ হবে না। সাদা প্যাচের ভেতর যে লোমগুলো থাকে, সেগুলোর রং যদি কালো থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে এখানে মেলানোসাইট এখনো সক্রিয়।

প্রশ্ন : সেই ক্ষেত্রে আপনারা কী করেন?

উত্তর : সেই ক্ষেত্রে হলো ফোটো থেরাপি। ফোটো থেরাপি দেওয়া হয় সেখানে। এতে ওষুধ খেতে হবে না।

প্রশ্ন : কতদিন পর্যন্ত এই চিকিৎসা চলে?

উত্তর : এটাতো বলা কঠিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করে এক থেকে দুই বছর, কারো কারো ক্ষেত্রে তিন থেকে চার বছরও লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে তার ধৈর্য থাকতে হবে। আমি প্রথমেই রোগীকে ধৈর্য রাখার কথা বলে নিই। আমরা যদি ফটো থেরাপি করি, এর ভালো ফলাফল আসবেই। তো যেসব রোগীরা ধৈর্য ধরে থাকে, তারা শেষ পর্যন্ত ভালো ফলাফল পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *