ধূমকেতু ডেস্ক : ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিটের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়াতে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি ভারতীয় ঋণেও নেওয়া হয়েছে আলাদা একটি প্রকল্প। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর চলতি অর্থবছরেই এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, মোংলা বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে দক্ষতা বাড়াতে ৪৩৩ কোটি টাকার অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প সব প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতীয় ঋণে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর আরও একটি প্রকল্পও পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা আসবে ভারতীয় ঋণ থেকে।
সরকারি অর্থায়নে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে তার আওতায় ১৪ সারির কনটেইনার হ্যান্ডলিং উপযোগী তিনটি এবং ৩০ টন ক্ষমতার দুটি মোবাইল হারবার ক্রেন কেনা হবে। ৫০ টন ক্ষমতার মাল্টিপারপাস ক্রেন কেনা হবে দুটি।
১০টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, ৩০ টন ধারণ ক্ষমতার দুটি, ৪০ টন ধারণ ক্ষমতার দুটি এবং ৫ টন ধারণ ক্ষমতার ট্রাক কেনা হবে চারটি। এ ছাড়া ১০ টনের ১০টি ডাম্প ট্রাক ক্রয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মোংলা বন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় ঋণে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির নামে অপর প্রকল্পের আওতায় বন্দরের ১ ও ২ নম্বর জেটিতে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সব ধরনের সুবিধা রেখে নির্মাণ করা হবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড। কনটেইনার খালাসেও একটি ইয়ার্ড নির্মাণ হবে।
একই সঙ্গে নির্মাণ করা হবে সার্ভিস ভেসেল জেটি, পণ্য সংরক্ষণে শেড এবং জাহাজ মেরামতে নির্মাণ করা করে আলাদা ইয়ার্ড। এ ছাড়া বন্দরের অভ্যন্তরে রেল ও সড়ক সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। বন্দরের নিরাপত্তায় নির্মাণ করা হবে সীমানা প্রাচীর। বন্দর ভবনেরও সম্প্রসারণ করা হবে।
চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অধিক সংখ্যক জাহাজ বন্দরে নোঙর করতে পারবে। ফলে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা বাড়বে। ভারত, নেপাল ও ভুটান এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবে বলে মনে করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. জাহিরুল হক জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। কিন্তু বর্তমানে মোংলা বন্দরে যে অবকাঠামো সুবিধা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ কারণে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় ‘লাইফ লাইন’ মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরের মোংলা বন্দরের ব্যবহার ১০ গুণ বেড়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে এ বন্দরের চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু এই বন্দরের যে কনটেইনার টার্মিনাল রয়েছে তা বর্তমান সময়ের জন্য উপযোগী নয়। বন্দরের আধুনিকায়ন বিকল্প নেই।
মোংলা বন্দর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সেলাবুনিয়া মৌজায় পশুর নদী ও মোংলা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত। খুলনা শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্রবন্দর ১৯৫০ সালে স্থাপিত হয়।