প্রচ্ছদ

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে ১৭ নির্দেশনা

ধূমকেতু রিপোর্ট: খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে মালয়েশিয়ার আদলে দেশের ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এক্ষেত্রে ঋণখেলাপিকে আদালতে যেতে হলে বকেয়া ঋণের ৫০ শতাংশ অগ্রিম জমা দেয়াসহ ১৭ দফা নির্দেশনা রয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে (এফআইডি) এ নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। এগুলো বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

এসব নির্দেশনার বাকিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান ও আদায়ে সরকারি টাস্কফোর্স গঠন, অবলোপন (রাইট অফ) ঋণ আদায়ে লিগ্যাল অ্যাকশন টিম গঠন, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব ঋণখেলাপি শনাক্তকরন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ব্যাংকারদের যোগসাজশ আছে কিনা- তা চিহ্নিত করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব চাওয়া।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কমে আসত যদি বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বলবত ও বাস্তবায়ন করা যেত।

এসব আইনে কিছু দুর্বলতা থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। সে জন্য এ আইন সংশোধন করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল শপথ নিয়ে একদিন পরই বৈঠক করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ওই বৈঠকে তিনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস, এ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত কারা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

সূত্র মতে, এসব নির্দেশনার মধ্যে অর্থমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন- কিভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের নির্দেশ দেন তিনি।

তবে সংশোধনের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ব্যাংক কোম্পানি আইনকে অনুসরণের নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশনার মধ্যে আরও আছে- ব্যাংকের লেনদেন আরও স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা নিশ্চিত করতে ‘ব্লক চেইন টেকনোলজি’ প্রয়োগ করতে সব ব্যাংককে বলা হবে।

নির্দেশ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংককে। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা গড়ে তুলতে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, যে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, সেটি খেলাপি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান এবং তা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

একই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই খেলাপির হার মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকিং খাতে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা মন্দ ঋণ হবে। এটি হিসাব থেকে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে, যা অবলোপনকৃত ঋণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময়ে খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। তবে এ পর্যন্ত কি পরিমাণ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে- অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এর প্রকৃত হিসাব চাওয়া হবে ব্যাংকগুলোর কাছে।

পাশাপাশি এসব অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে- তাও জানতে চাওয়া হয়। অবলোপনকৃত আদায় একটি লিগ্যাল অ্যাকশন টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ টিম আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করতে হবে।

এসব খেলাপি হওয়ার কারণ এবং এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা আছে কিনা- সেটিও অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়া হয়।

সেখানে বলা হয়, ঋণখেলাপিদের যুক্তি বাস্তবসম্মত কিনা বা অনীহামূলক আচরণ সংবলিত খেলাপি কিনা, তাও বের করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপি ঋণ কতটুকু বেড়েছে, এ বৃদ্ধির পেছনে কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে হবে।

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর এসব নির্দেশ বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। খেলাপি ঋণের হার বর্তমানে ১৩ শতাংশ। এটি অনেক বেশি। এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশ হলে ঠিক ছিল। এখন সেটি নিচের দিকে নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *