ইব্রাহীম খলিল জুয়েল: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নে বিনামূল্যের হাট বসিয়েছে ‘মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। করোনার কারণে চলমান লকডাউনে অসহায় হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের লোকজন পবিত্র রমজান মাসে সেখান থেকে বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিতে পারছেন। হাটটি বসানো হয়েছে আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ইরা গ্যাস স্টেশন চত্বরে।
ফ্রি হাটে আছে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সংগৃহীত লাউ, টমেটো, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ টাটকা সবজি ও তাজা মাছ। রয়েছে ইফতারসামগ্রীও। সপ্তাহে একদিন- প্রতি বুধবার বসে এই হাট। গত বছরও লকডাউন ও রোজার সময় তারা এমন আয়োজন করেছিল। ফ্রি হাট থেকে এক সপ্তাহের বাজার নিয়ে যান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষেরা।
উদ্যমী কিছু তরুণের এমন উদ্যোগ হাসি ফুটিয়েছে অসহায়দের মুখে। এমন উদ্যাগে উপকারভোগীরা খুবই সন্তোষ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ফ্রি হাটে কঠোরভাবে মানা হয় স্বাস্থ্যবিধি। আর এর সবই করছেন মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা। এখানে কাজ করে তারা মানসিক প্রশান্তি পান বলে জানালেন। এর থেকে ভালো কাজ আর হতে পারে না বলেও জানালেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
আরও পড়ুন: রিকশাচালকের ৬০০ টাকা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ : ভালুকায় তিন পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
প্রতি হাটে পাঁচশত মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হয় এসব পণ্য। সেই হিসেবে ২ হাজার মানুষ এবার পেয়েছেন পণ্য সহায়তা। মধ্যবিত্ত, যারা ফ্রি হাটে আসতে সংকোচ বোধ করেন তাদেরকেও ফোন দিলে গোপনে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এসব পণ্য। উদ্যোক্তারা জানান, সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে এবং প্রবাসীদের সহযোগিতায় তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সংগঠক অনিক কুমার নন্দী বলেন, “এখানে হাট বসানোর ফলে সহজেই ঈশ্বরগঞ্জের পাশাপাশি নান্দাইল ও নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। প্রতি হাটে আমাদের প্রায় ১৫০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবী পালা করে শ্রম দিয়ে থাকেন। আমরা মাছ ও সবজি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করি। কৃষকেরাও আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে সহায়তা করে থাকেন। ফলে করোনাকালে কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা এসব পণ্য হাটে এনে সাজিয়ে রাখেন এবং যারা এই পণ্যের জন্য আসছেন তাদের থলেতে যত্নসহকারে তুলে দেন।” তিনি ধূমকেতু ডটকমকে আরো জানান, ঈদের আগে তারা ঈদ সামগ্রী বিতরণ করবেন।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী, উপদেষ্টা ও দাতাদের আর্থিক সহায়তায় এই কর্মসূচি চলছে। ফাউন্ডেশনের তিন হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। নিবন্ধিত দাতা রয়েছেন ১২০ জন। আর্থিক সহায়তা করলেও দাতাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চান না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার ও আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. জুবের আলমসহ অনেকেই এই হাট পরিদর্শন করেছেন। তারা হাটের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, “একটা প্রশংসনীয় কাজ করছে মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন। দরিদ্র মানুষের সহায়তায় অন্যদেরও এভাবে এগিয়ে আসা দরকার।”