ইকমার্সের অগ্রযাত্রা নিয়ে কথা বললেন দেশের অন্যতম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন মিয়া (Ripan Mia)
বর্তমান শিল্পের অবস্থার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৩ সত্যিকার অর্থেই একটি ফলপ্রসূ ইভেন্ট ছিল। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ জন ইউনিকর্ন তৈরি করতে চায়। এই আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে দেশের ই–কমার্সগুলো খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
তদুপরি, যেহেতু আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল ইকোনমি থেকে স্মার্ট ইকোনমি তে রুপান্তর হতে যাচ্ছি সেক্ষেত্রে ই–কমার্স আমাদের অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে, যা কিনা বাংলাদেশের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। ই– কমার্সকে যদি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের বাকি অবকাঠামোগুলোকে একটি অত্যাধুনিক এবং দক্ষ সিস্টেমে রুপান্তর করা সম্ভব হবে যা কিনা আমাদের এসডিজি (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ৮,৯,১১,১২ ও ১৩ বাস্তবায়নে বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ইকোনমি দেশে রূপান্তর করতে হলে ই কমার্সের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের ই–কমার্স শিল্পের বর্তমান বাজারের আকার 1.3 বিলিয়ন, প্রতিদিন প্রায় 300,000 অর্ডার প্রসেস হয়ে থাকে এবং মাথাপিছু মাত্র ২ বিলিয়ন বিনিয়োগের মূল্য রয়েছে যা প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় খুবই নগণ্য। এমনকি আমাদের দেশে কোভিড ১৯ মহামারীর সময়েও এর বৃদ্ধি সেভাবে পরিলক্ষিত হয় নি।
তবে উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় দিক হচ্ছে আমাদের ই–কমার্সের বৈচিত্রতা, একের অধিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির আইটেম এটিকে এক ভিন্ন রুপ দিয়েছে৷ বর্তমানে ই–কমার্সে খাদ্য দ্রব্য, পোশাক, ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীরও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে যার মাধ্যমে ই–কমার্স একটি বিশাল ভোক্তা কমিউনিটি যুক্ত করতে পেরেছে যা স্মার্ট ইকনোমির লক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়াও, ই–কমার্সের প্রধান ৪ উপাদান, স্বাধীন ব্র্যান্ড প্ল্যাটফর্ম, এফ–কমার্স, ডেলিভারি এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর কল্যাণে একটি বিশাল পরিমাণের অর্ডার জেনারেট হয়। এ অর্ডার গুলো ডেলিভারি কোম্পানিগুলো সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ই–কমার্সকে আরো গতিশীল রূপ দিয়েছে। মূলত এরা একে অপরের পরিপূরক।
এছাড়াও, একটি স্মার্ট ইকোনমির লক্ষ্যে এম এফ এস পেমেন্ট ট্রেন্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ই–কমার্সে বিশাল পরিমাণে পেমেন্ট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। ভবিষ্যতের একটি স্মার্ট ইকনোমির উদ্দেশ্য সহজ ভাবে মুদ্রা লেনদেন করতে পারার কনো বিকল্প নেই।
অতএব, যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের ই–কমার্স শিল্পে পরবর্তী বিপ্লব ঘটাতে চাই তাহলে আমাদের কিছু নিয়ম নীতি ও ই–কমার্স বান্ধব কিছু সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
১. আধুনিক স্বাক্ষরতা (Digital Literacy): একটি স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে হলে এবং ই–কমার্সে জনগণের ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হলে সবার মধ্যে ডিজিটাল স্বাক্ষরতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
- স্কুলে আধুনিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ ( Include Digital Education in Schools):
এখন থেকেই আগামী প্রজন্মকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যার মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল স্বাক্ষরতা কোনো বিলাসিতা নয়। পড়াশোনায় এ আই (AI) এর ব্যবহার একটি কার্যকরি ভূমিকা হতে পারে। যার ফলে, শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় ছাত্র ছাত্রীরা ডিজিটাল প্লাটফর্ম, টুলস ইত্যাদি ব্যবহার করে সহজেই নেভিগেট করা শিখতে পারবে।
৩. জালিয়াতি এবং কেলেংকারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ(Prevent Fraud and Scams): ই– কমার্সের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে যেন ই–কমার্স এর নামে কোনো পিরামিড স্কিম না গড়ে উঠে এবং গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রগতিশীল ডেটা নীতি( Device Progressive Data policies):
বাংলাদেশে ডেটা বেশ ব্যায়বহুল। টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রির উপর উচ্চ কর আরোপ এর একটি বিশেষ কারণ। ই–কমার্স এবং এর অন্তর্ভুক্ত সকল ডিপার্টমেন্টর সফল অপারেশন নিশ্চিত করতে, ডেটা আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হওয়া দরকার। এইসব দিক বাস্তবায়ন করতে পারলে তখনই আমরা একটি স্মার্ট ইকোনমির ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব, একইসাথে সব দিক থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন নিশ্চিত করতে পারব।
পরিশেষে, আমরা যদি সত্যিই বাংলাদেশে ই–কমার্সের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম হই, তাহলে আমরা নিশ্চিত করতে পারব যে আমরা ই–কমার্সের মাধ্যমে আরও পণ্য ও পরিষেবা প্রদান করে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারব। ফলস্বরূপ, একইসাথে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেবা বাড়বে এবং বিপুল জনগণকে জনশক্তিতে রুপান্তর করা সম্ভব হবে।
রিপোর্টঃ Md Hamidur Rahman